অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা

দেশের সেরা শিক্ষাবিদদের নিয়ে গঠিত জাতীয় শিক্ষানীতি কমিটি যখন ড. কুদরাত-এ–খুদা কমিশনের আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার কথা বলেছিল, সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বেশ আত্মতুষ্টিতে ভুগছিলেন। কিন্তু সাত বছর পর দেখা গেল শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো মৌলিক পরিবর্তনই আসেনি। সরকার একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষানীতি করে শিক্ষাকে যতটুকু এগিয়ে নিয়েছিল, হেফাজতের দাবি অনুযায়ী পাঠক্রমে রদবদল ঘটিয়ে তা অনেকাংশে ম্লান করে দিয়েছে। সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।

প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার প্রধান যুক্তি হলো, রাষ্ট্র প্রত্যেক শিশুকে যোগ্য নাগরিক হওয়ার ভিতটি তৈরি করে দেবে, যাতে সে ভবিষ্যতে পড়াশোনা না করলেও নিজের জীবন-জীবিকা বেছে নিতে পারবে। পঞ্চম শ্রেণিতে তা সম্ভব নয়। তবে এও স্বীকার করতে হবে যে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করতে হলে যেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষানীতি ঘোষণার পর এর বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলে এত দিনে কাজটি হয়ে যেত। এক বছর আগের প্রস্তাব নাকচ করে এখন পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য কমিটি গঠনেরই বা কী যুক্তি থাকতে পারে? সরকার একদিকে বলছে উন্নয়নের জন্য টাকার অভাব নেই, আরেক দিকে শিক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দের হার কমানো হচ্ছে। এটি শিক্ষামনস্ক কোনো সরকারের নীতি হতে পারে না।

 জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশের সঙ্গে সহমত পোষণ করে আমরা বলতে চাই, যতই কঠিন হোক না কেন, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার বিকল্প নেই। কোনো সমস্যা দেখা দিলে বাস্তবতার নিরিখেই তা সমাধান করতে হবে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন পদ্ধতি ও পাঠক্রমের নামে প্রাথমিক শিক্ষায় যে বিশৃঙ্খলা চলছে, তারও অবসান ঘটাতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষায় অভিন্ন পাঠক্রম চালু হোক, এটাই সময়ের দাবি। পেছনে সরে আসার উপায় নেই।