অস্ত্রের মহড়া

সম্পাদকীয়

গত বুধবার প্রথম আলোয় ‘অস্ত্রধারীরা ধরা পড়ে না’ শিরোনামে যে খবর ছাপা হয়েছে, তাতে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর কিছু চিত্র উঠে এসেছে। এর অর্থ এই নয় যে দেশের অন্যান্য স্থানে অস্ত্রের মহড়া বন্ধ আছে। দেশের বিভিন্ন স্থানেই কমবেশি অস্ত্রের মহড়া চলছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের বিবদমান পক্ষ এতে জড়িয়ে পড়ছে।

চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর ঘটনায় দেখা যায়, রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন, প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই অস্ত্রের এসব মহড়া দেওয়া হয়ে থাকে। আগে সরকারি ও বিরোধী দল একে অপরের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে অস্ত্রের মহড়া দিত। এখন যেহেতু বিরোধী দলের সে রকম শক্তি নেই, সেহেতু সরকারি দলের দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে শক্তি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটছে। উদাহরণ হিসেবে নোয়াখালীর ঘটনা উল্লেখ করা যায়। সেখানে এক পক্ষে আছেন একজন পৌরসভা মেয়র, অপর পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সেখানে পাল্টাপাল্টি হামলায় সাংবাদিকসহ দুজন নিহত হয়েছেন। এরপরও অস্ত্রধারীরা ধরা পড়ে না। ধরা পড়লেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসে। গত ১৩ মে পাবনার গণপূর্ত বিভাগে আওয়ামী লীগের নেতারা যে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছেন তাঁদের কাজ দেওয়ার দাবিতে, সেই ঘটনায়ও কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানা নেই।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, চলতি বছরের ২৭ জুন চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছেন আ ফ ম সাইফুদ্দিন নামের এক তরুণ। পুলিশ তাঁকে খুঁজে পাচ্ছে না। আর তিনি যে সংগঠনের কর্মী, সেই সংগঠনের নেতারা বলছেন, তাঁরা নিশ্চিত নন সাইফুদ্দিনই অস্ত্রের মহড়া দিয়েছেন।

১৩ মে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা যায় আনোয়ার হো্সেন ও সহিদউল্লাহ নামের দুই তরুণকে। প্রথম আলোয় অস্ত্রধারীদের ধরা না পড়ার বিষয়ে খবর ছাপা হওয়ার পর সহিদউল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু অন্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে যে ১৩ জন অস্ত্রধারীর কথা উঠে এসেছে, তার মধ্যে সহিদউল্লাহসহ এ পর্যন্ত পাঁচজন ধরা পড়েছেন। অন্যরা পলাতক। কেউ গ্রেপ্তার হলেই নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে বহিষ্কার বা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। এর আগে সবাই নিশ্চুপ থাকাকে শ্রেয় মনে করেন। গত মঙ্গলবার নোয়াখালীতে গ্রেপ্তার হওয়া সহিদউল্লাহ বসুরহাট পৌরসভার মেয়র মির্জা আবদুল কাদেরের অনুসারী। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা এই তরুণের জীবন শুরু হয় নির্মাণশ্রমিক হিসেবে। পরে তিনি চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীতে পরিণত হন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিরোধী দলের কোনো নেতার বিরুদ্ধে সাজানো মামলা হলে কিংবা সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশ তদন্ত ছাড়াই তাঁদের গ্রেপ্তার করে। কিন্তু সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা অস্ত্রের মহড়া দিলেও ধরা পড়েন না। আইন প্রয়োগের এ দ্বিমুখী নীতি আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? আসামিদের ধরার চেষ্টা হচ্ছে—এ আশার বাণী শোনাতে থাকেন নতুন কোনো অঘটন না ঘটা পর্যন্ত। প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া বন্ধ করতে হলে সব অস্ত্রধারীকে ধরতে হবে। সেই সঙ্গে যাঁরা হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসব অস্ত্রধারীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন, তাঁদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।