এবং চট্টগ্রামেরও বিপর্যস্ত দশা

সড়কগুলো ভেঙে যাওয়ার আশু দৃশ্যমান কারণ দীর্ঘ জলাবদ্ধতা বটে, তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। সাম্প্রতিক জলাবদ্ধতার আগেও অনেক সড়ক ভাঙাচোরা ও খানাখন্দময় ছিল। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সড়ক সংস্কার বা উন্নয়নের নামে প্রতিবছর ১২৫ কোটি টাকা খরচ করে, কিন্তু তার সুফল মেলে না। সংস্কারকাজের গুণগত মান এমনই যে সংস্কার করা সড়ক অল্প সময়ের মধ্যে আবারও ভাঙে, ভাঙা অংশগুলোতে দিনে দিনে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। এমন অভিযোগও আছে যে সড়ক সংস্কারের কিছু কাজ করা হয় বর্ষা মৌসুমের ঠিক আগে এবং বৃষ্টি হলে সংস্কার করা জায়গাগুলো আবার ভাঙে। আরও একটা বড় সমস্যা হলো, নগরের বিভিন্ন সেবা সংস্থা নিজেদের অবকাঠামো নির্মাণ বা সংস্কারের প্রয়োজনে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে চলে যায়, সেগুলো সে অবস্থায় পড়ে থাকে দীর্ঘ সময়। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহির কোনো ব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না।

ভাঙাচোরা সড়ক চট্টগ্রাম নগরের বহুবিধ সমস্যার একটি। কিন্তু এর মাশুল বিরাট। সেখানকার ব্যবসায়ী মহল যথার্থই বলেছেন, তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের সবচেয়ে বড় বাধা সড়ক যোগাযোগের দুরবস্থা। ভাঙাচোরা খানাখন্দময় সড়কে যানজট অবশ্যম্ভাবী এবং যানজটের কারণে কর্মঘণ্টার ক্ষতি জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতিই বটে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে রাজধানী ঢাকায় যানজটের কারণে বছরে গড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়, অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান মনে করেন, চট্টগ্রামে এই ক্ষতির পরিমাণ ঢাকার চেয়ে বেশি হবে।

সুতরাং চট্টগ্রাম নগরের রাস্তাঘাটের বিপর্যস্ত দশা দূর করার কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে; দ্বিতীয়ত, সড়কের সংস্কারকাজের গুণগত মান বাড়াতে হবে, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে অপেক্ষাকৃত টেকসই পদ্ধতি ও উপাদান ব্যবহার করে সড়ক নির্মাণ করতে হবে; তৃতীয়ত, সড়কের রক্ষণাবেক্ষণব্যবস্থা জোরদার করতে হবে; চতুর্থত, নগরের সব সেবা সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

সড়ক সংস্কারের পেছনে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হবে, কিন্তু তার সুফল পাওয়া যাবে না—এটা বন্ধ করতে হবে।