এর জন্য জবাবদিহি চাওয়া হোক

সম্পাদকীয়

সরকার প্রান্তিক ও দুর্গম এলাকায় মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে নানা কর্মসূচি ও প্রকল্প চালু করেছে। কিন্তু সেসবের সুফল কতটুকু মিলছে আসলে? সুনামগঞ্জের দুর্গম হাওর এলাকায় দুই উপজেলার মানুষের জন্য দুটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু সেগুলো কোনো কাজেই আসেনি।

অথচ একেকটি অ্যাম্বুলেন্স কিনতে খরচ পড়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্স সম্প্রতি বন্যায় পানিতে ডুবে গেছে। এককথায় বলা যায়, মানুষের তো কোনো উপকারেই আসেনি অ্যাম্বুলেন্সগুলো, বরং এতগুলো টাকা জলে গেল।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শাল্লা ও জামালগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দাদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দিতে চার বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দুটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছিল। রোগী বহনের প্রথম দিনেই হাওরের মধ্যে গেলে শাল্লার অ্যাম্বুলেন্সটিতে ত্রুটি দেখা দেয়।

এরপর থেকেই সেটি পরিত্যক্ত। এক দিন রোগী উঠলেও জামালগঞ্জের অ্যাম্বুলেন্সটিতে কোনো রোগীই উঠতে পারেনি। উদ্বোধনী যাত্রায় অতিথিদের নিয়ে সেটি নদীতে আটকে যায়। এরপর থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি সুরমা নদীর ঘাটে বাঁধা। রোদ-বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত অ্যাম্বুলেন্স দুটির যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে বন্যায় শাল্লার অ্যাম্বুলেন্সটি হাওরের পানিতে ডুবে গেছে।

শাল্লা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দীপু রঞ্জন দাস বলেন, শাল্লার হাওর এলাকায় বর্ষাকালে প্রসূতিদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। কেন অ্যাম্বুলেন্সটি অযত্ন-অবহেলায় এত দিন পড়ে ছিল, অবশ্যই তা তদন্ত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের অ্যাম্বুলেন্সের এ অবস্থার জন্য তাঁরা লজ্জিত। বারবার কর্তৃপক্ষকে বলেও কোনো লাভ হয়নি।

এখানে স্বাস্থ্য বিভাগের স্পষ্ট অবহেলা আছে বলে মনে করেন তিনি। জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থেকে আমরা জানতে পারছি, সেখানকার অ্যাম্বুলেন্সটির সংস্কারের জন্য একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তার মানে এখানে স্পষ্টই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায় আছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, শুরুতে অ্যাম্বুলেন্সটির কোনো চালক ছিলেন না। গতিও ধীর, জ্বালানিও বেশি লাগে। এ ছাড়া ত্রুটি সারাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি।

তাই এ অবস্থা হয়েছে। ২০টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে ২০টি উপজেলা নৌ অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছিল। এসব নৌ অ্যাম্বুলেন্সের বেশির ভাগই হয় এখন পরিত্যক্ত, নয়তো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।

কিছুতে রয়েছে চালকের অভাব। তার মানে গোটা প্রকল্প থেকেই কার্যকর কোনো সুফল আসেনি। কেনাকাটা শেষ, প্রকল্পও শেষ। ফলে এর দায়দায়িত্বও শেষ। একটি প্রকল্প এভাবে মুখ থুবড়ে পড়ল, এর জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে জবাবদিহি চাওয়া হোক।