ক্রমশ ভবন-স্থাপনায় ঢেকে ফেলে যেন ‘ঢাকা’ নামকরণের সার্থকতা দেখানো হচ্ছে! কলকাতাকে কল্লোলিনী তিলোত্তমা করার কথা বলেছিলেন কবি, আর বাস্তবিকই ঢাকার সুখ্যাতি ছিল প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে। সেই ঢাকা এখন কংক্রিটের জঙ্গল। যেখানে কোনো শহরের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ খোলা জায়গা থাকা দরকার, সেখানে ঢাকার ভাগে আছে মাত্র ৮ শতাংশ। এভাবে ঢাকা শহর বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে, স্বস্তি উবে যাচ্ছে কর্মক্লান্ত রাজধানীতে। ঢাকাকে বাঁচানোয় কি কিছুই করার নেই?
কিছুদিন আগে নগর কর্তৃপক্ষ খোলা আকাশ দেখা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অজস্র বিলবোর্ড অপসারণ করেছে। কিন্তু মাঠ-পার্ক, জলা, পুকুর ও খাল-বিল-নদী ভরাট করে যে ভবন তোলা হচ্ছে, তা অপসারিত হবে কীভাবে? বাণিজ্যিক সংস্থা ও
ঢাকার খোলা জায়গা দখল করছে সরকারি প্রতিষ্ঠানওব্যক্তি উদ্যোগে নির্বিচারভাবে উন্মুক্ত স্থান নিঃশেষ করা হচ্ছে। নগর পরিকল্পনা অনুসরণের বালাই নেই যেন। সরকারি সংস্থাগুলোও পিছিয়ে নেই। সোমবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের বিশ্ব বসতি দিবসের আলোচনায় এ উদ্বেগই
ফুটে উঠেছে।
ঢাকা এখন জীবন, সমাজ, যোগাযোগ এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বৈরী এক শহর। মোট আয়তনের ২৫ শতাংশের বেশি উন্মুক্ত স্থান ঢাকায় থাকা দরকার এর অতি জনসংখ্যার জন্য। তারপরও বাস্তব অসুবিধা মেনে এই ৮ শতাংশ এলাকাকে প্রতিবছর বাড়িয়ে তোলা যায় না? ফুটপাত, সড়ক বিভাজক, পার্ক ও খেলার মাঠ এবং নদীতীর বাঁচালেও তো কিছুটা রক্ষা হয়।
ঢাকার জন্য যে বিশদ নগর পরিকল্পনা বা ড্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছিল, সেখানে ন্যূনতম উন্মুক্ত স্থান ও জলাশয় বাঁচানোর কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন মহলের চাপে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত তো হচ্ছেই না, উপরন্তু একে বদলে ফেলার চিন্তাও হচ্ছে। অথচ দেড় কোটি মানুষের প্রতিদিনের নিশ্বাস-প্রশ্বাস ও চলাচল, ঘুম-বসবাস এই শহরেই। বিশ্বের মধ্যে বসবাসের অযোগ্য শহরের তকমা অর্জনের পরও যে না নগর কর্তৃপক্ষ না সরকারের নীতিনির্ধারক মহল; কারোরই টনক নড়ছে না।