কঠোর হাতে আইনের প্রয়োগ করুন

হাঙর শিকার ও কেনাবেচা আইনত অপরাধ। কিন্তু দক্ষিণ উপকূলের জেলেরা বঙ্গোপসাগরে বড়শি ও ইলিশের জাল দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে হাঙর হত্যা করছেন। এসব হাঙর শুঁটকি করে কিছু ব্যবসায়ী বিদেশে পাঠাচ্ছেন। নির্বিচার হাঙর নিধনের ফলে সামুদ্রিক প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বরগুনা, পটুয়াখালী ও বাগেরহাটের অন্তত ২০টি শুঁটকিপল্লিতে হাঙরের শুঁটকি তৈরি করা হয়। শীত মৌসুমের শুরুতে, বিশেষ করে নভেম্বর মাসের শেষ দিকে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে হাঙর শিকার করেন। অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া, জাপানসহ অন্তত ১০টি দেশে হাঙরের শুঁটকি, তেল, চামড়া, কান, পাখা, হাড়সহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চড়া দামে বিক্রি হয়। এ কারণে গত কয়েক বছর মাছের চেয়ে হাঙর শিকারে ঝুঁকছেন জেলেরা।

পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, তা ব্যবসায়ীদের তথ্য থেকেই বোঝা যায়। তিন বছর আগে যেখানে ৭-৮ মেট্রিক টন হাঙর চালান হতো, এখন সেটা দাঁড়িয়েছে ১৬-২০ মেট্রিক টনে। বর্ষার চার মাস ছাড়া বাকি আট মাসই শুঁটকিপল্লিতে হাঙরের শুঁটকি করা হয়। সামুদ্রিক মাছের ডিম থেকে লাখো-কোটি পোনা হলেও হাঙর ব্যতিক্রম। ১০ থেকে ১২ বছরে হাঙর পূর্ণবয়স্ক হয় এবং ২ থেকে ১৬টি বাচ্চা দেয়। এ কারণে হাঙরের সংখ্যা দ্রুত বাড়ে না।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে হাঙরের অর্ধেকের বেশি প্রজাতি অতিরিক্ত আহরণ ও নিধনের ফলে বর্তমানে হুমকির সম্মুখীন। এটি বিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুযায়ী, হাঙর ও শাপলাপাতা মাছ হত্যা ও কেনাবেচা দণ্ডনীয় অপরাধ। এতে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। অথচ সবার চোখের সামনেই নির্বিচার হাঙর নিধন, সেগুলো শুঁটকি করা চলছে ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, হাঙর বিপন্ন প্রাণী হওয়ার পরও কেন সেটা বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে? বন বিভাগ, কোস্টগার্ড কেন হাঙর নিধন ও কেনাবেচা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না?

মৎস্য ও প্রাণি বিশেষজ্ঞদের সমুদ্রের বাস্তুসংস্থানে হাঙর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হাঙর মূলত বড় আকারের শিকারি মাছ ও সিল খায়। হাঙর কমে গেলে সমুদ্রের তলদেশে সূর্যালোক প্রবেশ করবে না। ফলে ব্যাপক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেবে সামুদ্রিক প্রতিবেশে। জেলে ও ব্যবসায়ীদের সাময়িক এ লোভের ফলাফল হবে সুদূরপ্রসারী। সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে হাঙর রক্ষায় উদ্যোগী হন। পাশাপাশি হাঙর নিধন না করার জন্য জেলেদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করাও জরুরি।