কুমিল্লায় কাউন্সিলর খুন

সম্পাদকীয়

কুমিল্লা সিটি কাউন্সিলর মোহাম্মদ সোহেল ও তঁার এক সহযোগী যেভাবে মুখোশ পরা সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন, তাতে আমাদের রাজনীতির ক্লেদাক্ত ও নিষ্ঠুর চিত্রই বেরিয়ে এসেছে। গত সোমবার কাউন্সিলর নিজের কার্যালয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে যখন আলাপ করছিলেন, তখনই সন্ত্রাসীরা এসে এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক কাউন্সিলর ও তাঁর সহযোগী হরিপদ সাহাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার আটজনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে এবং শোভন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি শাহ আলমের এলাকা থেকে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র, হাতবোমা, ব্যাগ ও শার্ট উদ্ধার করেছে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গত তিন বছরে এ নিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে তিনজন খুন হন। গত বছরের নভেম্বরে খুন হন যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমান চৌধুরী, যিনি ২০১৭ সালে নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে খুন হন আরেক ছাত্রলীগ নেতা, তিনিও ২০১৭ সালের নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। সে ক্ষেত্রে কাউন্সিলর সোহেল খুনের সঙ্গে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের যোগসূত্র থাকাও অস্বাভাবিক নয়। সিটি করপোরেশনের মেয়াদ প্রায় শেষ। ২০২২ সালের প্রথমার্ধে ফের নির্বাচন হওয়ার কথা। কেবল কুমিল্লা নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

কাউন্সিলর মোহাম্মদ সোহেল ২০১৩ ও ২০১৭ সালে পরপর দুবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। দ্বিতীয়বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এলাকায় মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। তা কেউ কেউ ভালোভাবে নেননি বলে স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা রয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন, পাশের ওয়ার্ডের শাহ আলম, সাব্বির ও ‘জেল সোহেল’ হিসেবে পরিচিত সোহেলের সঙ্গে নিহত কাউন্সিলরের বিরোধ ছিল। মামলার আসামিরা এলাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে পত্রিকায় খবর এসেছে।

কাউন্সিলর সোহেল হত্যার আসামিদের বিরুদ্ধে এর আগেও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ একাধিক মামলা ছিল। এর মধ্যে একজন জেল খাটার কারণে জেল সোহেল নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। কিন্তু কেউ শাস্তি পাননি; দিব্যি এলাকায় অপকর্ম চালিয়েছেন। রাজনীতি ও ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান।

কুমিল্লার আগের দুই খুনের ঘটনায় মামলা হলেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশের তদন্তই শেষ হয়নি। তিন বছর পর এসে পুলিশ বলছে, শিগগিরই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে। অভিযোগপত্র জমা না দিলে বিচারিক কাজ শুরু হবে কীভাবে? কেন তাঁরা তদন্ত শেষ করতে পারলেন না? এ বিষয়ে কি তাঁদের ওপর রাজনৈতিক চাপ ছিল? কারা সেই চাপ দিয়েছেন, বের করা প্রয়োজন। খুনের বিচার না হওয়ার কারণেই অপরাধীরা আশকারা পেয়ে যায়।

আমরা আশা করব, কুমিল্লার কাউন্সিলর মোহাম্মদ সোহেল হত্যার সব আসামিকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্তে কোনো গাফিলতি বা কালক্ষেপণ করা যাবে না। আমরা চাই না স্থানীয় রাজনীতি কিংবা আধিপত্য বিস্তারের নামে আর কারও মায়ের বুক খালি হোক।