রাজশাহীর আমবাগানে প্রশংসনীয় উদ্যোগ

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের কৃষি পর্যটন মূলত চা-বাগানকেন্দ্রিক। যার কারণে সিলেটের চা-বাগানগুলো সারা বছর পর্যটকে ভরপুর থাকে। তবে দেশের বাইরে, বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়ায় কৃষি পর্যটন আরও বেশি বিস্তৃত। নানা ধরনের ফলের বাগান ও কৃষিপণ্যের সমাহারে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠে কৃষি পর্যটনকেন্দ্রগুলো। সেখানে সাপ্তাহিক ছুটিতে মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে সময় কাটাতে যায়, ফসল চাষ ও শস্য আহরণ বা সংগ্রহে অংশ নেয়, সেই ফসল কিনে আনারও সুযোগ থাকে। এর ফলে সাপ্তাহিক নিত্যপণ্য, শাকসবজি ও ফলফলাদির অনেক কিছুই জোগাড় হয়ে যায়। প্রকৃতি, গাছগাছালি ও কৃষি প্রক্রিয়ার সঙ্গেও বড়-ছোট সবার পরিচয় ঘটে।

তবে কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ার কারণে এ দেশে আলাদা করে কৃষি পর্যটনের প্রয়োজনীয়তা কখনো ছিল না। কিন্তু নগরায়ণের কারণে কমে যাচ্ছে কৃষিজমি, আধুনিক জীবনযাপনের প্রভাব ও বাস্তবতায় কৃষিভিত্তিক পরিবারগুলোও ভেঙে পড়ছে। ফলে অনেক মানুষ এখন বলতে গেলে
কৃষি–সম্পর্কিত নানা কর্মকাণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। প্রকৃতির সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে তেমন কৃষি পর্যটন নেই, যেখানে ঘুরতে গিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য মানুষ প্রকৃতি ও মাটির টান অনুভব করতে পারবে। এ ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় কৃষি পর্যটনের সম্ভাবনা তৈরি করেছেন হাসান আল সাদী নামের এক যুবক। ইতিমধ্যে ফুলে ফুলে সাজানো এ বাগানে ৫০ টাকার টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা ঢুকছেন।

পলাশবাড়ী গ্রামের ১৩ বিঘা আয়তনের এ বাগানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের ৩৫০টি আমগাছ, যেগুলোর বেশির ভাগই ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী। আছে ছয় রঙের টিউলিপসহ ১৬ জাতের ফুলগাছ নিয়ে বাগান, একটি পুকুর ও সেখানে ভাসছে ফুল দিয়ে সাজানো নৌকা। সময় কাটানোর জন্য রয়েছে বিভিন্ন কর্নার। আইনে স্নাতকোত্তর উদ্যোক্তা হাসান আল সাদী জানান, তাঁরা চান ক্রেতারা বাগানে আসবেন, গাছে পাকা আম দেখবেন, নিজ হাতে পাড়বেন, খাবেন, কিনে নিয়ে যাবেন। এখন টমেটো ওষুধ দিয়ে পাকানো হয়। তাঁদের গাছে টমেটো থাকবে। দর্শনার্থীরা আসবেন। নিজ হাতে গাছ থেকে পাকা টমেটো তুলবেন, নিয়ে যাবেন। আমবাগানটি বছরের ৯ মাসই পড়ে থাকে। ফলে সারা বছরই বাগানে কৃষিভিত্তিক নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ইতিমধ্যে সপরিবার মানুষ এ বাগান দেখতে আসছে। শিশুরা বাগানে খেলছে ও ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রকৃতি ও গাছগাছালির সান্নিধ্যে সময় কাটাচ্ছে তারা। স্মার্টফোন ও গেজেটে অভ্যস্ততার এ সময়ে দৃশ্যটি দারুণই বটে। আমরা রাজশাহীর এই যুবককে অভিবাদন জানাই। তাঁর এ প্রশংসনীয় উদ্যোগ অন্যদেরও কৃষি পর্যটন করার অনুপ্রেরণা দেবে।