কৃষ্ণের সেলুন–পাঠাগার

সম্পাদকীয়

যখন শহরে বসে বিজ্ঞজনেরা এই অভিমত দিচ্ছেন যে বই-পত্রিকা পাঠের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে, তখন নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌরসভার বিরিশিরি এলাকায় কৃষ্ণ চন্দ্র শীলের সেলুন–পাঠাগারকে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বলেই বিবেচনা করতে হবে। ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক দীপক সরকার এই পাঠাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে পাঠাগারের প্রতি আগ্রহ-ভালোবাসা আছে সেলুনের মালিক কৃষ্ণ চন্দ্র শীলেরও।

সেলুনে অনেক সময় মানুষের ভিড় থাকে। একজনের চুল কাটার সময় অন্যদের বসে থাকতে হয়। অপেক্ষমাণ মানুষ যাতে বই পড়ে সময় কাটাতে পারেন, সে উদ্দেশ্যে সেলুনে পাঠাগার খোলা হয়েছে। প্রথম আলোর নেত্রকোনা প্রতিনিধি সেলুনে গিয়ে দেখেছেন, আশপাশের অনেক তরুণ কৃষ্ণের সেলুনে এসে পড়াশোনা করছেন। আরও জানা যায়, কৃষ্ণ ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় আগ্রহী ছিলেন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে স্কুলের চৌকাঠ না পেরোতেই তাঁকে বাপ-দাদার পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু বই পাঠের প্রতি তাঁর আগ্রহ রয়ে গেছে। কাজের অবসরে সুযোগ পেলেই তিনি বই-পত্রিকা পড়েন। এই খবর জানতে পেরে দীপক সরকার সেলুনে পাঠাগার গড়ে তোলেন। সেলুনে বসে পাড়ার পাশাপাশি আগ্রহীরা বাড়িতে বই নিয়েও পড়তে পারেন। বর্তমানে তাঁর সেলুনে ২০০ বই আছে।

সেলুনে বই পাঠের ব্যবস্থা থাকায় কৃষ্ণ চন্দ্র শীল ব্যবসায়িকভাবেও লাভবান হয়েছেন। সেলুনে বই পড়ার ব্যবস্থা থাকায় গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে। কৃষ্ণ চন্দ্র শীল বলেন, ‘করোনাকালেও আশপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বই পড়তে আসেন। অনেকে বই বাড়িতে নিয়ে যান। একটি রেজিস্টার খাতায় পাঠকেরা নিজ উদ্যোগেই নাম লিখে রাখেন। এতে আমি খুব আনন্দ পাই।’ সেলুনটির পেছনে বিরিশিরি পিসি নল মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়, বিরিশিরি মিশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, গারো ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশনসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও এখানে বই পড়তে আসেন।

দেশে একসময় পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার ছিল। স্থানীয় বিজ্ঞজনেরা এর উদ্যোগ নিতেন। সম্প্রতি সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না। আইন অনুযায়ী সব মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠাগার থাকা বাধ্যতামূলক। যদিও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই তা মানে না। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বইয়ের জন্য বরাদ্দ অর্থ অন্য খাতে খরচ করা হয়। আশা করি, কৃষ্ণ চন্দ্রের সেলুন সংশ্লিষ্টদের চোখ খুলে দেবে।

পারিবারিক কিংবা পাড়া-বিদ্যালয়কেন্দ্রিক পাঠাগার গড়ে তোলা হলে বই পড়ার প্রতি তরুণেরা যেমন আগ্রহী হবেন, তেমনি নানা ধরনের সামাজিক সমস্যাও দূর হবে। কৃষ্ণের সেলুন পাঠাগার কেবল প্রশংসনীয় উদ্যোগ নয়, একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্তও বটে। বইপ্রেমী দীপক সরকার ও কৃষ্ণ চন্দ্র শীলের প্রতি আমাদের অভিনন্দন।