গাছের পরিচর্যায় প্রযুক্তি

সম্পাদকীয়

উদ্ভাবন বা আবিষ্কার বিষয়টি এখন যতটা গবেষণা বা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক, একটা সময় সেটি নিশ্চয়ই ছিল না। কারণ, ইতিহাসই আমাদের সাক্ষ্য দেয়। প্রথাগতভাবে শিক্ষিত না হয়েও বা অর্ধশিক্ষিত বা একেবারেই সাধারণ কোনো মানুষকেও আবিষ্কারের নেশা পেয়ে বসতে পারে। যেমনটা আমরা দেখি জামালপুর সদর উপজেলার ইলেকট্রিশিয়ান রাজু আহম্মেদ কৃষকদের মাঠের কাজে রোদের তাপ থেকে রেহাই দিতে বানিয়ে ফেলেছেন সোলার ফ্যান। তেমনি মানিকগঞ্জেও এক নার্সারি ব্যবসায়ী উদ্ভাবন করেছেন এমন এক টবের, যাতে গাছ লাগানো ও পরিচর্যার প্রতি মানুষকে আরও বেশি উৎসাহী করে তুলবে। ব্যতিক্রমধর্মী এ টব ইতিমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার ধল্লা এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে নার্সারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবদুল হালিম। তিনি এমন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যাতে গাছের টবে একবার পানি দিলে তিন মাসের মধ্যে আর পানি দিতে হবে না। এ ছাড়া টবে সংরক্ষিত পানি ও সার শেষ হলে নোটিফিকেশন বা সংকেত আসবে মুঠোফোনে। সাধারণ টবে প্রতিদিন গড়ে এক লিটার পানি দিলে বছরে ৩৬৫ লিটার পানি লাগে। দেশে ঘরে ঘরে গাছের টব আছে। সে হিসাবে টবের সংখ্যা লাখ লাখ। এতে পানির অপচয়ও হয় অনেক।

এক হিসাবে দেখা গেছে, সাধারণ টবে ৯৫ শতাংশ পানি অপচয় হয়, অপর দিকে হালিমের উদ্ভাবিত ডিজিটাল টবে ৯৫ শতাংশ পানিই গাছ শোষণ করে। এতে পানির অপচয় রোধ হয়। এ ছাড়া প্রতিদিন পানি দেওয়ার ঝামেলাও নেই।

ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রেহাই পেতে কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারে এ ডিজিটাল টব। এ টবে পানি জমে থাকার সুযোগ নেই, এডিসের লার্ভা তৈরি হওয়ারও সুযোগ নেই। ময়লা–আবর্জনামুক্ত হওয়ায় এ টব ঘরের ভেতরে যেকোনো জায়গায় রাখা যায়। ইতিমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এ উদ্ভাবনের স্বীকৃতি মেলেছে। মিলেছে পেটেন্টও।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের নার্সারি ছয় মাস পর্যবেক্ষণের পর এখন এ টব সংগ্রহ করছে। অনেক মানুষ হালিমের কাছ থেকে ডিজিটাল টব নিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেছেন, হালিমের এ টব উদ্ভাবন কৃষি ও শিল্পে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমরা আশা করছি, মানিকগঞ্জ থেকে এ ডিজিটাল টব গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। আরও মানুষকে অনুপ্রাণিত করুক হালিমের এ উদ্ভাবন। তাঁকে অভিনন্দন।