শহরে কিংবা গ্রামে সবখানেই বসতবাড়ি, দোকানপাট, রাস্তাঘাট, কলকারখানা ইত্যাদি সব ধরনের স্থাপনাই নির্মাণ করা উচিত পরিকল্পিত উপায়ে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর নির্দেশিত নিয়মকানুন অনুযায়ী। কিন্তু রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে তো বটেই, এমনকি জেলা শহরগুলোতেও স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিকল্পনাহীনতা এমনকি বিশৃঙ্খলা লক্ষ করা যায়। এর ফলে আমরা নিজ নিজ জনপদগুলোকে সার্বিকভাবে স্বচ্ছন্দে বসবাস ও চলাফেরার অযোগ্য করে তুলছি। এই বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটানো জরুরি।
এই বিবেচনায় এখন থেকে গ্রামাঞ্চলেও ঘরবাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণের বাধ্যতামূলক বিধান করার উদ্যোগ অবশ্যই একটি দরকারি উদ্যোগ। ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন ২০১৭’ নামের একটি আইনের খসড়ায় মন্ত্রিসভা গত সোমবার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এ আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের ক্ষেত্রে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণে আগ্রহী ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদন নিতে হবে।
বলা বাহুল্য, আইনটির উদ্দেশ্য ভালো। তবে এ ধরনের আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এ দেশের অভিজ্ঞতা খুব একটা প্রীতিকর নয়। একদিকে আইন লঙ্ঘন করার প্রবণতা, অন্যদিকে আইন প্রয়োগের নামে অযৌক্তিক হয়রানি করার প্রবণতা রয়েছে। খোদ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে মফস্বলের পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পর্যন্ত হয়রানি, অনৈতিক লেনদেন, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদির অভিযোগ পাওয়া যায়। মফস্বলের পৌরসভাগুলোর আওতাধীন এলাকায় স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার পেছনে অনৈতিক লেনদেন, রাজনৈতিক প্রভাব, স্বজনপ্রীতি রয়েছে। তাই অধিকাংশ পৌর এলাকায় ঘরবাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা বেড়ে চলেছে অত্যন্ত বিশৃঙ্খলভাবে।
গ্রামাঞ্চলে এই আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন বেশ কঠিন হবে। কারণ, ইউনিয়ন পরিষদগুলোর সার্বিক সুশাসনের রেকর্ড সন্তোষজনক নয়। নতুন যেকোনো আইন-বিধান তাদের হাতে তুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করা দরকার যে সেসব আইন-বিধানের বলে লোকজনের হয়রানি, অবৈধ লেনদেন ইত্যাদি অনিয়ম বাড়বে না। কিংবা এটা স্থানীয় ভোটের রাজনীতিতে আরেকটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে না।
কোনো আইনই যেন জনগণের হয়রানির কারণ না হয়, তা নিশ্চিত করা জরুরি।