দেশে কোনো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় এখনো কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। যেটি বসবাসের যোগ্য নগর গঠনে অন্যতম অন্তরায়। এর মধ্যে আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, চিকিৎসাবর্জ্য অপসারণে নিয়মের কোনো বালাই নেই। অধিকাংশ হাসপাতালেরই এদিকে মনোযোগ নেই। এ–সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট আইন থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। আইন না মানার যে সংস্কৃতি আমাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে, তারই প্রকৃত উদাহরণ বলা যায় একে। তেমনটিই আমরা দেখতে পাচ্ছি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ফেলা হচ্ছে। ফলে তৈরি হয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, এক হাজার শয্যার হাসপাতালটিতে প্রতিদিন এর দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে। ভবনের পেছনে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার নিয়ম থাকলেও, হাসপাতাল চত্বরের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ময়লা-আবর্জনা ও চিকিৎসাবর্জ্য ফেলা হয়েছে। পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত খাবারের উচ্ছিষ্টসহ নানা বর্জ্য ফেলছেন রোগীর স্বজনেরা। এসব আবর্জনার কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
২০০৮ সালের চিকিৎসাবর্জ্য বিধিমালা আইন অনুযায়ী চিকিৎসাবর্জ্য পাঁচ প্রকার। সেগুলো হলো সংক্রামক, ধারালো, পুনঃ চক্রায়নযোগ্য,
তরল ও সাধারণ। এসব বর্জ্য ফেলার জন্য পৃথক পাঁচ রঙের ডাস্টবিন ব্যবহার করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের পেছনে ওই একটি স্থানেই সব ধরনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। ডাস্টবিনে পৃথক করে এসব বর্জ্য ফেলা হচ্ছে না। রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে জানতে পারছি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে এমনটি ঘটছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হাসপাতাল চত্বরের বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়া হয়তো শিগগির শুরু করা সম্ভব হবে। এটি যেন আশ্বাসে পরিণত না হয়, দ্রুত এর প্রতিফলন ঘটুক। আইন অনুযায়ী আলাদা ডাস্টবিনে বর্জ্য ফেলা হোক। হাসপাতালের অভ্যন্তরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে রোগী ও অন্য দর্শনার্থীদের মধ্যেও সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে নিয়মিত প্রচারণা চালানো হোক। হাসপাতালগুলোও করোনাভাইরাসের অন্যতম সংক্রমণস্থল। ফলে সেখানকার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। এতে শুধু রোগী ও দর্শনার্থীই স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে না, নিরাপদে থাকবেন চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও।