জিআই পণ্য

ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি পেল আরও ছয়টি পণ্য। সেগুলো হলো ঢাকাই মসলিন, রাজশাহীর সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, নেত্রকোনার বিজয়পুরের সাদা মাটি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ ও বাংলাদেশি কালিজিরা। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের একটি অর্জন। এ নিয়ে মোট ৯টি পণ্য জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পেল। বাকিগুলো হলো ইলিশ, জামদানি ও ক্ষীরশাপাতি আম। এসব পণ্য বাংলাদেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করবে বিশ্ববাসীর কাছে। প্রতিনিয়ত নেতিবাচক ঘটনার মধ্যে এ স্বীকৃতিপ্রাপ্তি নিয়ে আমরা গৌরব করতে পারি।

গত বৃহস্পতিবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি) উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে ছয়টি পণ্যের জিআই সনদ হস্তান্তর করা হয়। ডিপিডিটির রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত সচিব) আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, এখন থেকে অন্য কোনো দেশ এসব পণ্যের নাম নিজেদের বলে দাবি করতে পারবে না। জিআই স্বীকৃতির মাধ্যমে বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের চাহিদা ও রপ্তানি বাড়বে। এসব পণ্যের দাম বাড়বে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। ফজলি আম ও বাগদা চিংড়ি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

কোনো একটি দেশের নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা এবং সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে সেই দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে এখনো মাত্র ৯টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি আশাব্যঞ্জক নয়। ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন কন্ট্রোলার জেনারেল অব পেটেন্টস, ডিজাইনস অ্যান্ড ট্রেডমার্ক জানাচ্ছে, দেশটির জিআই–স্বীকৃত পণ্য ৩৭০টি। বিষয়টি নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করায় দেশটির কাছে নকশিকাঁথার মতো পণ্যের অধিকার আমরা হারিয়েছি।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ৯৫টি পণ্যের তালিকা পাঠানো হয় শিল্প মন্ত্রণালয়ে। জিআই পণ্য হিসেবে নির্বাচনে সেগুলো আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) সব শর্ত পূরণ করে কি না, তা যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিষয়টির অগ্রগতি বলতে এ কয়েক বছরে ওই তালিকা থেকে মাত্র আটটি পণ্যের জিআই–স্বীকৃতি অর্জিত হলো। ২০১৬ সালে জামদানির স্বীকৃতি এসেছিল। তালিকাটির মধ্যে আরও আছে ঠাকুরগাঁওয়ের সূর্যপুরী আম, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, বগুড়ার দই, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, চুয়াডাঙ্গার ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, দিনাজপুরের লিচু, হালদার রুই, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, রাঙামাটির হস্তজাতশিল্প, পোড়াবাড়ীর চমচম, সুন্দরবনের মধু, মধুপুরের আনারস ও সিলেটের কমলালেবুর মতো অনেক পণ্য। আমরা ডিপিডিটিসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করব, আরও বেশি বাংলাদেশি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি আদায়ে সচেষ্ট হোন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিমণ্ডলে পণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখুন বাংলাদেশকে।