চিকিৎসাসেবা সহজসাধ্য করুন

সম্পাদকীয়

‘ঝাড়ফুঁক দিয়ে চলে চিকিৎসা’ এবং ‘হাতবাঁধা জীবন কাটছে শিশুটির’ নামে সোমবার প্রথম আলোর ময়মনসিংহ সংস্করণে দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদ দুটি আমাদের প্রান্তিক সমাজে শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসাসেবা গ্রহণের অপ্রতুল সুযোগ এবং মানুষের অজ্ঞানতা ও কুসংস্কারের চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ঝাড়ফুঁক ও পানিপড়ার মাধ্যমে পেটব্যথা, ক্যানসারসহ সব রোগের চিকিৎসা দিচ্ছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বীরকামটখালী গ্রামের এক কিশোর কবিরাজ। যেকোনো রোগ সেরে যাচ্ছে—কবিরাজের স্বজনদের এমন অপপ্রচারে বিভ্রান্ত লোকজন সেই বাড়িতে ভিড় করছেন। কিশোর কবিরাজ কখনো ছোট একটি ঝাড়ু হাতে নিয়ে লোকজনের শরীরে ছোঁয়াচ্ছে, কখনো রোগীদের আনা পানি ও তেলের বোতলে ফুঁ দিয়ে দিচ্ছে। মানুষের সরল বিশ্বাস, এতেই রোগ সেরে যাচ্ছে। তাঁরা কবিরাজের বাক্সে টাকাও দিয়ে আসছেন।

অন্যদিকে নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌরসভার দশাল এলাকায় আট বছরের একটি কন্যাশিশুকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হচ্ছে। শিশুটির বাবা দিনমজুর, মা গৃহিণী। জন্মের দুই বছরের মাথায় শিশুটির মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু আচরণ দেখা দেয় বলে মা–বাবা জানিয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য, বাঁধন খুলে দিলে শিশুটি মাথায় চাপড়ায় ও হাত কামড়ায়। যেদিকে খুশি চলে যেতে চায়। অন্যকে মারধর করে, রাতে না ঘুমিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করে।

আট বছরের শিশুটির সমস্যাটি খুব সম্ভবত মানসিক বিকাশজনিত। জন্মের পরে যথাযথ খাদ্য ও পুষ্টি না পেলে শিশুর মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সুচিকিৎসা পেলে শিশুটির স্বাভাবিক জীবনে ফেরা অসম্ভব নয়। কিন্তু সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শিশুটির মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার ব্যাপারে মা–বাবার সচেতনতার ঘাটতি ও দারিদ্র্য। শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য মিলিয়েই যে সুস্থতা, সে ধারণা আমাদের সমাজে এখনো প্রতিষ্ঠিত নয়। সমাজের সচেতন ও বিত্তবানদের শিশুটির চিকিৎসায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

চিকিৎসাব্যবস্থা সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয়বহুল। আবার অলৌকিক কোনো কিছুর ওপর অনেকের প্রবল অন্ধবিশ্বাসও রয়েছে। এ দুটি কারণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে অনেকে ঝাড়ফুঁকের ওপর নির্ভর করেন। এ ধরনের অপচিকিৎসায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয়ে যায়। মানুষের সরল বিশ্বাসকে পুঁজি করে কেউ কেউ প্রতারণার ফাঁদ খুলে বসে। ঝাড়ফুঁক বন্ধ করতে হলে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হবে। দরিদ্র মানুষের জন্য সহজসাধ্য করতে হবে চিকিৎসাসেবা