টিভির সেট টপ বক্স

সম্পাদকীয়

মাস কয়েক আগে সরকার বিজ্ঞাপনমুক্ত বিদেশি টিভি চ্যানেল দেখানোর সিদ্ধান্ত নিলে কেব্‌ল অপারেটররা এই বলে বাগড়া বাঁধিয়েছিলেন যে বিদেশি চ্যানেল বিজ্ঞাপনমুক্ত করতে যে কারিগরি সুবিধা থাকা দরকার, তা তাঁদের নেই। এ জন্য তাঁদের আরও সময় দিতে হবে। কেবল তা-ই নয়, তাঁরা কোনো ঘোষণা ছাড়াই বিদেশি চ্যানেল দেখানো বন্ধ করে দিলেন। এমনকি যেসব চ্যানেল বিজ্ঞাপনমুক্ত ছিল, তা-ও দেখানো থেকে বিরত থাকলেন।

সে সময় সরকার তাঁদের অন্যায় দাবির কাছে নতি স্বীকার না করায় দেখা গেল সহজেই বিজ্ঞাপনমুক্ত বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার সম্ভব হয়েছে। তখনই সিদ্ধান্ত হয় যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেট টপ বক্সের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে চ্যানেলের সংযোগ দিতে হবে। সেট টপ বক্স বসানোর সুবিধা হলো এতে গ্রাহক টিভি সেটে অনুষ্ঠান পরিষ্কার দেখতে পারবেন এবং সরকারও কেব্‌ল অপারেটরের আয় থেকে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর হিসেবে পাবে।

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের টিভি দর্শকেরা কেব্‌ল অপারেটরদের কাছে জিম্মি ছিলেন। এতে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হয়। বিদেশি বিজ্ঞাপন দেখানোয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল দেশি টিভি চ্যানেলগুলো। বিলম্বে হলেও সরকার কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এ জন্য সরকার তথা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাই। বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ঢাকা শহরের গ্রাহকদের সেট টপ বক্স বসাতে হবে এবং গ্রাহকদের সেটা অপারেটরের কাছ থেকেই নিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে কেবল অপারেটররা তা আদৌ সরবরাহ করতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠে এসেছে। আর সেট টপ বক্সের স্বল্পতার দোহাই দিয়ে তাঁরা গ্রাহকদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছেন। ঢাকা শহরে এলাকাভেদে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ আমদানিকারকেরা বলছেন, ১ হাজার ৬০০ টাকায় সেট টপ বক্স বিক্রি করা সম্ভব।

সেট টপ বক্স নিয়ে এ বিশৃঙ্খলার অবসান হওয়া প্রয়োজন। অপারেটররা যেন গ্রাহকদের জিম্মি করে সেট টপ বক্সের নামে ইচ্ছেমতো দাম নিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। কেব্‌ল টিভি ফিড অপারেটররাও ন্যায্য দামে সেট টপ বক্স বিক্রির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। তঁারা কেবল অপারেটরদের কাছ থেকে সেট টপ বক্স নিয়ে গ্রাহকদের কাছে সরাসরি সরবরাহ করেন।

আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে যেটা করা উচিত তা হলো সেট টপ বক্সের দামের একটি সর্বোচ্চ সীমা ঠিক করে দেওয়া। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার তা করতে পারে। স্বল্পতা থাকলে জরুরি ভিত্তিতে সেট টপ বক্স আমদানির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। কেবল অপারেটররা নিজেরাই বলেছেন, তাঁদের হাতে যথেষ্ট সেট টপ বক্স নেই। এ কারণে বেশি দামে বিক্রি করছেন। ভবিষ্যতে সেট টপ বক্স এলে দাম কমবে। একই সঙ্গে ৩০ নভেম্বরের যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা যদি যৌক্তিক না হয়, তবে তা বাড়ানোর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।

কেব্‌ল টিভি সেবায় দীর্ঘদিন ধরে যে বিশৃঙ্খলা চলে আসছিল, সেখানে শৃঙ্খলা আনার স্বার্থে এ উদ্যোগগুলো খুবই জরুরি। তবে শৃঙ্খলা কার্যকর করার এই সময়ে গ্রাহক যেন কোনোভাবেই জবরদস্তির শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যথাযথভাবে এ উদ্যোগগুলো কার্যকর করা গেলে গ্রাহক যেমন প্রয়োজনীয় সেবা পাবেন, তেমনি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পথও বন্ধ হবে। আমরা আশা করি, এ ক্ষেত্রে সরকার কোনো ধরনের শিথিলতা বা নমনীয়তা দেখাবে না।