টেকনাফে অবৈধ ইটভাটা

সম্পাদকীয়

পরিবেশ, নদী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা নিয়ে দেশে এত আইন আছে, সেসব কোনো কাজে আসে না বললেই চলে। নয়তো পরিবেশের এত ক্ষতি কেন, এত নদী ধ্বংস কেন, এত জীববৈচিত্র্য বিপন্নের মুখে কেন? প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এত অভিযান চালালেও সেসবের কোনো সুফল আদতে পাওয়া যায় না। তাহলে সেসব অভিযানে কি শুভংকরের ফাঁকি আছে? তেমনটিই দেখা গেল

কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের দৈংগ্যাকাটা এলাকায়। সেখানে বনাঞ্চলের পাশে গড়ে ওঠা দুটি অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে রীতিমতো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দৈংগ্যাকাটা বনাঞ্চলের পাশে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই এক যুগ ধরে ইট উৎপাদন করছে দুটি ইটভাটা। এত দিনেও ইটভাটা দুটি উচ্ছেদ করা যায়নি। ২২ নভেম্বরের মধ্যে ইটভাটা দুটি ভেঙে ফেলতে জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ৮ নভেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর গত শনিবার স্থানীয় প্রশাসন ইটভাটা দুটিতে অভিযান চালিয়ে ভাটা দুটির ইট পোড়ানো কিছু অংশ ভেঙে দেয়। অথচ আদালতের সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ইটভাটা দুটি সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ফলে অভিযানের কয়েক ঘণ্টা পরই আবারও ইট উৎপাদন শুরু করে ভাটা দুটি, ইট বিক্রিও চলছে। এদিকে আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়সীমাও পার হয়ে গেছে, বহাল থাকল ইটভাটাগুলোও।

স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রায় ১২ বছর আগে ভাটা দুটি তৈরি হয় দুর্গম এই পাহাড়ি এলাকায়। বন, পরিবেশ ও প্রশাসনের লোকজনকে ম্যানেজ করেই চলছিল ভাটাগুলো। ভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হয় কাঠ। বনাঞ্চলের পাশে তৈরি হওয়ায় পাহাড়ি বন ও সামাজিক বনায়ন উজাড় হচ্ছে। ইটভাটাসংলগ্ন এলাকায় রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি সরকারি ক্লিনিক, দুটি মসজিদ, ফসলি জমি ও লোকবসতি। ফলে এত বছর ধরে পরিবেশের যে ক্ষয়ক্ষতি হলো, এর দায় বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা-উপজেলা প্রশাসনকেই নিতে হবে। মেসার্স এমকেবি ব্রিকসের মালিক আবুল হাশেম সেখানকার ইউপি সদস্য আর মেসার্স এএইচবি ব্রিকসের মালিক আবুল কাশেম তাঁর ভাই। কিন্তু তাঁরা কি এতই প্রভাবশালী যে তাঁদের বিরুদ্ধে এক যুগ ধরে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি? তাহলে এটাই কি প্রতীয়মান হয় না, তাঁদের অবৈধ ভাটা চালাতে সহায়তা করে গেছে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর? উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মানার কী ফল তাঁরা ভোগ করবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।