ডেসটিনির গ্রাহকেরা টাকা পাবেন কি

সম্পাদকীয়

অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে বিতর্কিত বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন, সভাপতি ও সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদসহ ৪৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম। এর মধ্যে রফিকুল আমীনকে ১২ বছর কারাদণ্ড ও ২০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর সাবেক সেনাপ্রধানকে দেওয়া হয়েছে চার বছর কারাদণ্ড ও সাড়ে তিন কোটি টাকা জরিমানা। অন্যদেরও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে। আমরা এ রায়কে স্বাগত জানাই।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ডেসটিনি কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিরুদ্ধে প্রায় ১ হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় অভিযুক্ত সবাই দণ্ডিত হয়েছেন।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ডেসটিনি বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) পদ্ধতির ব্যবসায়ের নাম করে মানুষের কাছ থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছিল। এখন পর্যন্ত গ্রাহকেরা অর্থ ফেরত পাননি। ডেসটিনির পদাধিকারীদের রক্ষা করতে ক্ষমতাসীন দলের অনেক চাঁই চেষ্টা করেছিলেন। একজন সাবেক সংসদ সদস্য গাছ বিক্রি করে অর্থ ফেরত দেওয়ার ওয়াদাও করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি। সে সময় আপিল বিভাগের শর্ত ছিল, ডেসটিনি গ্রুপের এমডি রফিকুল আমীন এবং ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন জামিন পাবেন, যদি ছয় সপ্তাহের মধ্যে ৩৫ লাখ গাছ বিক্রি করে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা অথবা নগদ ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়। তাঁরা সেই শর্তও পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিরা কথিত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিজেদের নামেও বিপুল পরিমাণ সম্পদ কিনেছেন। এগুলোর মধ্যে বাড়ি, গাড়ি, সিনেমা হল ছাড়াও রয়েছে পাটকল, হিমাগার, টেলিভিশন চ্যানেল ও ধানিজমি।

আদালতের রায়ে ডেসটিনি কো-অপারেটিভ সোসাইটির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্ব ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করতে সরকারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুদকের আইনজীবী বলেছেন, ডেসটিনির ৫৬০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা আছে। এ ছাড়া আসামিদের যে পরিমাণ জরিমানা করা হয়েছে, তা থেকেও গ্রাহকদের অর্থ পরিশোধ করা যাবে। আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করলে এবং সেই আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কাছ থেকে কোনো অর্থ আদায় করা যাবে না।

আইনানুযায়ী বিবাদীপক্ষ উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু উচ্চ আদালতে যাওয়ার উদ্দেশ্য যদি হয় বিচারকাজকে প্রলম্বিত করা এবং গ্রাহকদের পাওনা না দেওয়ার চেষ্টা, সেটি কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আশা করি সরকার আদালতের নির্দেশনা অনুসারে উচ্চপর্যায়ের কমিটি করে যত দ্রুত সম্ভব গ্রাহকদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।

কেবল ডেসটিনি নয়, যুবকসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বহুস্তর ব্যবসার নামে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব অপকর্মের হোতাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক।