দায় এড়াতে পারে না ঢাকা ওয়াসা

রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায় ডায়রিয়া উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বাড়ছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) তথ্য অনুযায়ী, সেখানে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। ১২ দিনে ১৩ হাজার ৪৮৩ জন। এসব ডায়রিয়া রোগী রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, টঙ্গী ও উত্তরা থেকে আসছে বলে জানা যায়। তবে কেবল আইসিডিডিআরবি নয়, অন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালেও কমবেশি ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। বাসায় থেকেও অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছে।

আইসিডিডিআরবির তথ্যমতে, ৬০ বছর আগে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরুর পর এত রোগীর চাপ আগে তাদের সামাল দিতে হয়নি। ২০০৭ সালে প্রথম সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া রোগী আসে এ হাসপাতালে। তখন প্রতিদিন গড়ে এক হাজার রোগী এসেছিল। এরপর ২০১৮ সালে ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হলে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৫৭ রোগী ভর্তি হয়।

এ বছর ডায়রিয়ায় এখন পর্যন্ত মৃত্যুর কোনো খবর না এলেও আমাদের নিরুদ্বিগ্ন থাকার সুযোগ নেই। প্রথমত, পানিবাহিত এ রোগের উৎস খুঁজে বের করতে হবে। ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় খাবারের পানি সরবরাহ করে থাকে ঢাকা ওয়াসা। প্রতিষ্ঠানটির পানির মান নিয়ে অনেকের অভিযোগ আছে। বিশেষ করে তাদের সরবরাহ লাইনের ভেতরে ময়লা-আবর্জনা থাকে, অনেক এলাকায় ওয়াসার পাইপ থেকে ময়লাযুক্ত একধরনের হলুদ পানি বের হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান দাবি করেছিলেন, ঢাকা ওয়াসার পানি পুরোপুরি বিশুদ্ধ। ২০১৯ সালে যাত্রাবাড়ীর এক বাসিন্দা ময়লাযুক্ত পানি নিয়ে ওয়াসা অফিসে গিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেও তিনি তা গ্রহণ করার সাহস দেখাননি। কেবল যাত্রাবাড়ী নয়, ঢাকার বেশির ভাগ অঞ্চলে ওয়াসার সরবরাহ করা পানি খাওয়ার অযোগ্য। টিআইবির জরিপ অনুযায়ী ওয়াসার পানির মান খারাপ থাকায় গ্রাহকদের পানি ফুটিয়ে পান করতে হয় এবং এ জন্য ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস পোড়াতে হয় বছরে।

ওয়াসা যা-ই বলুক না কেন, পানিবাহিত রোগের অন্যতম উৎস ঢাকা ওয়াসার পানি। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ, যাদের পানি ফুটিয়ে খাওয়ার সুযোগ নেই, তাদের ময়লা ও জীবাণুমুক্ত পানিই খেতে হয় এবং তা থেকে ডায়রিয়া ছড়ায়। এ ছাড়া রাস্তার পাশের সস্তা হোটেল-রেস্তোরাঁয় সরবরাহ করা পানি ও খাবার থেকেও এ রোগ ছড়াতে পারে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশতাক হোসেন বলেছেন, এ সময় ডায়রিয়ার জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ঘটে। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর সাধারণ মানুষের মধ্যে হাত ধোয়ার প্রবণতা বেড়েছিল। তারা বাইরেও কম খেত। করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় মানুষের হাত ধোয়ার সেই অভ্যাস যেমন কমে গেছে, তেমনি রাস্তার পাশের হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবারের প্রবণতা বেড়েছে। এ কারণেও ডায়রিয়া বেড়ে যেতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম ডায়রিয়া সম্পর্কে জনগণের প্রতি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। জনসচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। কিন্তু ঢাকাবাসীকে, পানি সরবরাহকারী ঢাকা ওয়াসাকে সচেতন করবে কে? তারা দফায় দফায় পানির দাম বাড়িয়ে চলেছে, কিন্তু বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করতে পারছে না। ঢাকা ও এর আশপাশে যে হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে, এর দায় ঢাকা ওয়াসাও এড়াতে পারে না।