মঙ্গলবার ভোররাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়াবাজার-সংলগ্ন জগমোহনপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা ছুড়ে মেরে যারা সাতজন মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে এবং তাদের যারা এই নৃশংস অপকর্মে প্ররোচিত করেছে কিংবা মদদ দিয়েছে, আমরা তাদের সবার প্রতি তীব্রতম ধিক্কার জানাই।
নিরীহ সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারার এই জঘন্য রাজনীতি চলছে এক মাস ধরে। ২৯ দিনে নিহতের সংখ্যা উঠেছে ৪৬-এ। আর মঙ্গলবার কুমিল্লায় নিহত সাতজন যোগ হলে মোট নিহতের সংখ্যা হলো ৫৩। এই সংখ্যা আরও বাড়বে, কারণ কুমিল্লায় পেট্রলবোমা হামলার শিকার বাসটির আরও যে ১৬ জন যাত্রী গুরুতর দগ্ধ হয়েছেন, তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পেট্রলবোমায় পুড়ে কয়লা সাতজনযাত্রীবাহী যানবাহনে পেট্রলবোমা মেরে কিংবা আগুন ধরিয়ে দিয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারার এই নৃশংস অপকৌশল অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এর আগে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে দগ্ধ করা হয় ২৯ জনকে। যাদের একজন পরে মারা যান। রংপুরের মিঠাপুকুরে একটি যাত্রীবাহী বাসে মধ্যরাতে একই কায়দায় পেট্রলবোমা মেরে পুড়িয়ে মারা হয়েছে নারী-শিশুসহ ছয় যাত্রীকে। আর এখন শুরু হয়েছে রেলপথে নাশকতা-সহিংসতা। সোমবার গাজীপুরে চলন্ত ট্রেনে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারা হয়েছে, তাতে দগ্ধ ও আহত হয়েছেন পাঁচজন। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের শতাধিক প্যান্ডেল ক্লিপ খুলে ফেলায় ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হলে পাঁচজন আহত হন। এর এক দিন আগেই দুটি ট্রেনে বোমা হামলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়–সাইক্লোন-জলোচ্ছ্বাস বা মহামারি নয়, রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে এক মাসে অর্ধশতের বেশি মানুষের প্রাণহানি আর শত শত মানুষের গুরুতর জখম ও অঙ্গহানি ঘটা কোনো স্বাভাবিক, সুস্থ সমাজের লক্ষণ নয়। আর প্রতিদিনের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির কথা তো বলাই বাহুল্য। যে রাজনীতি দেশজুড়ে এই ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দায়ী, তাকে আমরা তীব্র ধিক্কারের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করি। মানুষ মারা কোনো রাজনীতি হতে পারে না। দেশ, জাতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর এই নিষ্ঠুর পথ থেকে সরে আসার জন্য আমরা আন্দোলনরত দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।