দখলচেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে শুরু করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কিংবা রংপুরের গাইবান্ধা পর্যন্ত সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরা বারবার খবরের শিরোনাম হচ্ছে। প্রতিনিয়ত জমি হারানোর শঙ্কা কাজ করে তাদের মধ্যে। দিন দিন ভিটেমাটিও সংকুচিত হয়ে এসেছে এসব জাতিগোষ্ঠীর লোকদের। এরই মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার হাটবাকইল এলাকায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশান দখলচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। দুর্বৃত্তরা সেখানে হামলা চালালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়।

গত বৃহস্পতিবার সকালে শ্মশানের বাঁশের সীমানাবেড়া ও শবদাহ করার উপকরণ ভাঙচুর এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পুলিশের উপস্থিতির কারণে তারা পালিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তাদের কাউকে আটক করা হয়নি। পরে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করতে গেলেও তাদের ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর হাটবাকইল গ্রামের বাসিন্দাদের ভাষ্য, উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের এই গ্রামের ৬৪ শতক জমির ওপর শ্মশানটি ব্রিটিশ আমল থেকে ব্যবহার করে আসছেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। ওই জমি নিয়ে বিরোধ চলছে, আদালতে মামলাও চলছে।

বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানালেন, আগে ছোট একটি জায়গা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশান হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সেটি ব্রিটিশ আমল থেকে হয়ে আসছে। ভূমি অফিসের রেকর্ডেও লেখা আছে, এ জায়গা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য ব্যবহার্য। পরে তারা ভূমি অফিসের রেকর্ড থেকে জানতে পারেন, শ্মশান হিসেবে ব্যবহৃত ছোট জায়গাটিই নয়, আশপাশের ৬৪ শতক জমিই তাদের। তখন তারা পুরো জমিটা দখলে নিয়ে সীমানাবেড়া লাগিয়ে দেয়। কিন্তু স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি জাল দলিল তৈরি করে সেই জায়গা দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এমনকি ওই জায়গা নিজের দাবি করে তিনি জেলা প্রশাসন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের বিবাদী করে মামলাও করেন। নাচোলের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন।

এখন ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সেই প্রভাবশালীই ভাড়াটে লোক দিয়ে এই হামলা চালিয়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন, তিনিই মামলা করলেন। অথচ আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে জোরপূর্বক জায়গা দখল করতে চাইছেন। শ্মশানে হামলার ঘটনার বিষয়টি জানেন না বলে প্রথম আলোর প্রতিনিধির কাছে মন্তব্য করেছিলেন নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, অভিযোগ না পেলেও এই শ্মশানকে দখলবাজি থেকে ঠেকানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে তাঁর। সেখানকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।