দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উপকারে নানা উদ্যোগ বা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা। এরই একটি নমুনা দেখা গেল রাজশাহীর বাগমারায়। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের স্বাবলম্বী করতে এক কর্মশালায় প্রতিদিন গাড়িভাড়া হিসেবে যে টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল, সেখানে পর্যন্ত ভাগ বসিয়েছেন প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। করোনা মহামারির মধ্যেও সরকারি বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ঠিকঠাক চলমান ছিল, সেখানে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের সামান্য টাকার ওপরও চোখ পড়ল তাঁদের! সরকারি কর্মকর্তাদের লোভের মাত্রা কোন পর্যায়ে ঠেকেছে, সেটিই ভাবনার বিষয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বিনা মূল্যে তিন মাস মেয়াদে টেইলারিং ও ব্লক-বাটিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এতে ৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী নারীকে দৈনিক যাতায়াত ভাতা হিসেবে ২০০ টাকা করে প্রত্যেককে ১২ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু নীতিমালা ভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা করে। বাকি সাড়ে ছয় হাজার টাকার পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে একটি করে নকল ও নিম্নমানের সেলাই মেশিন।
প্রশিক্ষণার্থীদের অভিযোগ, তাঁদের আপত্তি উপেক্ষা করে নকল ও নিম্নমানের সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে এটি দিয়ে কাজ করতে পারছেন না তাঁরা। মেশিনে বাটারফ্লাই কোম্পানির স্টিকার থাকলেও তা আসল নয়। বাজার যাচাই করে দেখা গেছে, আসল মেশিনের দাম দেখিয়ে নকল ও কম দামি মেশিন কেনা হয়েছে। কৌশলে ভাতার টাকায় ভাগ বসাতে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নীতিমালা ভেঙে এমনটা করেছেন। আরও হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালকের লেখা বইও সেই বরাদ্দে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে বইয়ের দাম ২৩০ টাকা, সেটির জন্য আবার ৫০০ টাকা করেও জনপ্রতি কেটে রাখা হয়েছে। যাঁরা ঠিকমতো পড়তেই জানেন না, তাঁদেরই যদি জোর করে বই ধরিয়ে দিতে হয়, তেমন বই কেন লিখতে যান সরকারি কর্মকর্তারা, সামান্য লজ্জাও কি নেই তাঁদের?
আমরা চাই, এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সামান্য টাকার লোভ যাঁরা সামলাতে পারেন না, তাঁদের রোখা না গেলে আরও বড় অনিয়মের হোতা হবেন তাঁরা। সময় থাকতে অবিলম্বে তাঁদের দৌরাত্ম্য থামান।