দুটি সেতু ভেঙে নতুন সেতু

রাস্তাঘাট, সেতু, ভবন—ইত্যাকার উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি অর্থের বেশুমার অপচয় নিতান্ত স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে। আর্থিক অনিয়মের মধ্য দিয়ে হলেও শেষ পর্যন্ত সেসব কাজের সুবিধা জনগণ ভোগ করতে পারে। কিন্তু এমন কিছু কাজ হয়, যার পেছনে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, অথচ তার সুবিধা জনগণ ভোগ করতে তো পারেই না, উল্টো সেটিই তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। খুলনার গল্লামারীতে ময়ূর নদের ওপর অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ তার বড় উদাহরণ।

ময়ূর নদে পাকিস্তান আমলের একটি সেতু ছিল। সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে তার পাশে ২০১৩ সালে নতুন সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সেতুটির উচ্চতা এমনভাবে রাখা হচ্ছিল যে সেখান দিয়ে কোনো নৌযান চলা সম্ভব নয়। সে সময় এভাবে সেতু বানাতে বাধা দিয়েছিলেন খুলনার নাগরিক সমাজের নেতারা। কিন্তু তঁাদের কথা না শুনে সেতুর কাজ শেষ করা হয় এবং ২০১৫ সালে তা উন্মুক্ত করা হয়। এতে ব্যয় হয় ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সেতু বানানোর পর যা হওয়ার তাই হয়েছে। তার নিচ দিয়ে নৌযান চলা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। কাজটি যে ভুল ছিল তা এখন খুলনার জিরো পয়েন্ট থেকে ময়লাপোতা পর্যন্ত শেরেবাংলা সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলার সময় কর্মকর্তারা অনুধাবন করতে পেরেছেন। তাঁরা এখন সাত বছর আগের সেই সেতু ও পাকিস্তান আমলে বানানো সেতু দুটোই ভেঙে দিয়ে সেখানে আরও ব্যয়বহুল সেতু বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা।

কাগজে–কলমে দেখা যাচ্ছে, সাত বছরের মধ্যে সেতুটি ভেঙে ফেলায় সরকারের সাত কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। আদতে এ ক্ষতি যে কত বড় তার আর্থিক হিসাব নিরূপণ করা সম্ভব নয়। কারণ, নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় পণ্যপরিবহন থেকে শুরু করে কত ধরনের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে তার কোনো লেখাজোখা নেই। এতে জনগণ ও সরকারের টাকার অপচয় হয়েছে। কিন্তু লাভবান হয়েছেন হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ। সেই ‘কয়েকজন মানুষ’ আবার লাভবান হতে নতুন সেতু বানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন কি না, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।

এ ছাড়া অপরিকল্পিত কাজের সঙ্গে কারা জড়িত, তদন্ত করে তা চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।