কয়েক দিন আগে ঢাকার লালবাগ এলাকায় এক কলেজছাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। দুর্বৃত্তরা পরে অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ফেলে রেখে যায়। এরপরই গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক ছাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হলেন। তিনি গত বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে, যিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, গোপালগঞ্জ শহরের হেলিপ্যাড থেকে নবীনবাগে তাঁর মেসে ফিরছিলেন। এ সময় চার থেকে পাঁচজন দুর্বৃত্ত তাঁদের গতি রোধ করে এবং পার্শ্ববর্তী একটি স্কুল ভবনে নিয়ে ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করে। এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে অবশ্য প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
এ দুটি ঘটনা দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি যেমন সামনে নিয়ে এসেছে, তেমনি নারীর নিরাপত্তাহীনতাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী যদি ক্যাম্পাস থেকে নিজের মেসে যেতে ধর্ষণের শিকার হন, তাহলে বুঝতে হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা নাজুক। আমরা কোন সমাজে বাস করছি, যেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী ক্যাম্পাস থেকে নিজের ঘরে ফিরতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন।
অন্যদিকে সরকার একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেও অর্ধেক শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করেনি। ফলে ছাত্র তো বটেই, ছাত্রীদেরও একটা বড় অংশকে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে হয়। ছেলেরা যেকোনো স্থানে থাকতে পারেন। কিন্তু মেয়েদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। বশেমুরবিপ্রবিতে তিন হাজার ছাত্রীর মধ্যে আবাসন হলে ঠাঁই হয়েছে মাত্র ৭০০ জনের। বাকি ছাত্রীদের ঘর ভাড়া করে থাকতে হয়। এটাও তঁাদের নিরাপত্তাহীনতার অন্যতম কারণ।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো গোপালগঞ্জে সহপাঠীর ধর্ষণের প্রতিবাদে যখন শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছিলেন, তখন স্থানীয় লোকজন ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ আছে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে জনগণের ভোগান্তি হলে সেটি দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের, স্থানীয় বাসিন্দা ও ছাত্রলীগের নয়। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীটি ধর্ষণের শিকার হন, তখন তাঁরা কোথায় ছিলেন? তাহলে কি দুর্বৃত্তদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কোনো যোগসাজশ আছে?
দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব তারা কতটা পালন করছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের একজন এলাকায় আগে থেকে
নানা দুষ্কর্ম করে আসছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখন নাকে তেল দিয়ে না ঘুমালে হয়তো মেয়েটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার
হতেন না। গ্রেপ্তার অপর দুজন স্থানীয় হরিজন সম্প্রদায়ের। সংশ্লিষ্ট পরিবার থেকে বলা হয়েছে, তঁাদের সন্তানেরা নিরপরাধ। প্রভাবশালীদের রক্ষা করতেই তঁাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগটি গুরুতর। সত্যিই
তাঁরা ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত না নিরপরাধ, তা–ও ভালোভাবে খতিয়ে
দেখতে হবে।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার দুজনই নারী।
একজন নারীর ওপর দুর্বৃত্তদের পাশবিক হামলার অভিঘাত কতটা মারাত্মক, পুরুষ কর্মকর্তারা উপলব্ধি করতে না পারলেও তাঁরা পারবেন আশা করি। অবিলম্বে সব দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করে বিচারে সোপর্দ করা হোক। তঁাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করতে সাহস না পায়।