নারীদের আত্মকর্মসংস্থানে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

সম্পাদকীয়

শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে গিয়েছেন নারীরা, সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানেও। কিন্তু যে পরিমাণ নারী শিক্ষিত হচ্ছেন, কর্মসংস্থানে এসে কমে যাচ্ছে সেই সংখ্যা। এ দেশের শিক্ষিত বেকারত্বের হারে বড় একটি অংশ মেয়েরা। চাকরির জন্য একের পর এক আবেদন করে তরুণদের অনেকের বয়সসীমাই পার হয়ে যায়, অনেকে হতাশায় নিমজ্জিত হন, আত্মহত্যার ঘটনাও দেখি আমরা।

মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, চাকরির আশা ছেড়ে দিয়ে ঘর-সংসার-সন্তান লালনপালনেই নিজেদের সীমাবদ্ধ করে ফেলেন। তার বিপরীতে বিপুল উদাহরণও আছে। অনেক নারী উদ্যোক্তার দেখা মেলে। এ ছাড়া চাকরি পেতে ব্যর্থ হওয়ার পর আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে নারীদের জন্য উজ্জ্বল উদাহরণ হতে পারেন যশোরের ঝিকরগাছার আসমা আক্তারের মতো নারীরা।

স্নাতকোত্তর এই নারী গবাদিপশুর চিকিৎসায় কয়েকটি ইউনিয়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। এতে পেশাগত জীবনেও তাঁর নিজস্ব একটি পরিচয় তৈরি হয়েছে। ঘটেছে অর্থ ও সম্মানের প্রাপ্তিও।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় সাতক্ষীরার মেয়ে আসমার বিয়ে হয় ঝিকরগাছায়। স্বামী বেকার থাকায় দরজির কাজ করেই সংসারের হাল ধরেন। পাশাপাশি চালিয়ে যান পড়াশোনা। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর পাস করেন। কিন্তু একের পর এক চাকরির আবেদন করেও সফল হননি তিনি। চাকরির বয়সসীমাও শেষ।

এরপরও তিনি হাল ছেড়ে দেননি। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নতুন উদ্যমে নেমে পড়েন। ব্র্যাক ও এসিডিআই/ভোকার সহযোগিতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগির পুষ্টি, স্বাস্থ্যসচেতনতা, কৃত্রিম প্রজনন ও টিকা দেওয়ার কাজের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন এবং দক্ষতাও অর্জন করেন। একসময় চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়া ৩৫ বছর বয়সী আসমা আক্তার এখন গবাদিপশুর সফল কৃত্রিম প্রজননসেবা দানকারী।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জি এম আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘একজন নারী গাভি ও ছাগির কৃত্রিম প্রজননসেবা এবং প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন, প্রথমে শুনে আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। পরে ফিল্ডে গিয়ে আসমা আক্তারের কাজ দেখেছি। তিনি ভালো কাজ করেন।’ এ পর্যন্ত তিনি ৩৫০টির বেশি গাভি ও ছাগির কৃত্রিম প্রজননসেবা প্রদান করেছেন।

মুঠোফোনে ডাক পেলেই মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যান গবাদিপশুর চিকিৎসায়। পাশাপাশি তিনি এলাকায় পশুপাখি লালনপালনে প্রশিক্ষণ দেন। আসমার স্বামীও এখন বেকার নেই, তিনি এখন মালয়েশিয়াপ্রবাসী। আসমার সংগ্রাম ও অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনেছে সংসারের দারিদ্র্য। আমরা এই নারীকে অভিনন্দন জানাই।