জীবনের জন্য যেমন পানি, জ্বালানির জন্য যেমন তেল, চিকিৎসার ক্ষেত্রে রক্তের জোগান তেমনি অপরিহার্য। এ জন্যই এটি ব্যবসার বিষয় হতে পারে না। চিকিৎসার উদ্দেশ্যে রক্ত দেওয়া ও নেওয়ার জন্য নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন বিধিমালা ২০০৮ রয়েছে। দেশের বেসরকারি রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্রগুলো এর কতটা মানছে, তা দেখা তাই জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতরভাবে জরুরি বিষয়। সরকার সেই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে—এটা তাই আশার খবর।
চিকিৎসার জন্য রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন হয় অনেক অসুখ ও দুর্ঘটনার রোগীর ক্ষেত্রে। প্রায়ই রক্তের জন্য আবেদন করতে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। ব্যক্তিগতভাবেও জানাশোনার মধ্যে থেকে রক্ত সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রক্ত সংগ্রহের যে ব্যবস্থা আছে, তা কতটা নিরাপদ? এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো সমীক্ষা ও নিয়মিত নজরদারি আছে বলে জানা যায় না।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও র্যাব রাজধানীর কিছু ব্লাড ব্যাংকে অভিযান চালিয়ে দেখেছে এগুলো আসলে কোনো শর্ত মানছে না। পেশাদার রক্তদাতারা টাকার বিনিময়ে রক্ত পরিসঞ্চালন ‘ব্যবসায়ীদের’ কাছে রক্ত জমা দেন। সেখান থেকে জরুরি পরিস্থিতিতে রক্তগ্রহীতারা রক্ত সংগ্রহ করেন। দেখা গেছে, রক্তদাতার রক্তের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা না করেই, নিরাপদ পরিবেশে শর্ত মেনে রক্ত গ্রহণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছাড়াই অনেক জায়গায়ই রক্তের লেনদেন চলে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করছে, রক্তবাহিত বেশির ভাগ মারাত্মক রোগের কারণ এ রকম অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালন।
সাধারণ মানুষ জরুরি পরিস্থিতিতে যথাযথ প্রতিষ্ঠান থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে পারবে না। তাই সতর্কতা মানানোর ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকেই। এ জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিদর্শক থাকা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে রক্ত আদান-প্রদানের আগে পাঁচ ধরনের পরীক্ষা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা লাগবে। এই কাজ স্বাস্থ্য প্রশাসনের। ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই কাজে তাদের সহযোগিতা করবে। কিন্তু সবার ওপরে দরকার স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সজাগ ও সক্রিয় নজরদারি।