পদ্মার বুকে রাস্তা

সম্পাদকীয়

পাবনার ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নে পদ্মা নদীর একটি চরে ৫৩টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দুটির অনুমতি রয়েছে। ছোট একটি এলাকায় এতগুলো ভাটা চলায় সেখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। আবার পদ্মার চর থেকে যে যেভাবে পারছে, মাটি কেটে ইট পোড়াচ্ছে। তারা এতই বেপরোয়া যে নদীর বুকে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের নবীনগর গ্রাম থেকে চর কুরুলিয়া পর্যন্ত নদীর পাড় দিয়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এক পাশে গ্রাম, অন্য পাশে পদ্মা নদী। দূরে তাকালে দেখা যাবে নদীর বুক চিরে জেগে উঠেছে বিশাল চর। চরজুড়ে সারি সারি ইটভাটা। দিনরাত খননযন্ত্র দিয়ে চরের ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। নদীতে বাঁধ দিয়ে তৈরি হয়েছে রাস্তা। পাড় কেটে সে রাস্তা দিয়ে মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। ২০১৪ সালে চরটিতে প্রথম ইটভাটা তৈরি হয়েছিল। খুব সহজে নদী কেটে মাটি পাওয়া যায় বলে প্রভাবশালীরা সেখানে অবৈধভাবে একের পর এক ভাটা বানিয়েই চলেছেন।

ভাটামালিকদের ভাষ্য, তাঁরা অবৈধভাবে কিছু করছেন না। প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই চরের মাটি কাটা হচ্ছে, ভাটা চলছে। অন্যদিকে প্রশাসনের বক্তব্য দায়সারা গোছের। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, সেখানে অবৈধ কিছু ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, প্রবহমান নদীতে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ অবৈধ। এতে নদীতে বাধার সৃষ্টি হয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়। নদীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। পরিবেশবিদেরা বলছেন, নদীতে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ এবং নদীর পাড় কেটে মাটি তোলা অপরাধ।

আজ আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদীর গুরুত্ব ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে দিবসটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে। একসময়কার নদীর দেশ বলে পরিচিত ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু গত কয়েক দশকে নির্বিচার দখল ও দূষণের ফলে অনেক নদীই আজ মৃত। যেগুলো বেঁচে আছে, সেগুলোও পড়েছে অস্তিত্বসংকটে। প্রশ্ন হচ্ছে, একটা চরে যদি অর্ধশতাধিক ইটের ভাটা চালু থাকে, তবে সেই নদী ও আশপাশের এলাকার জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের কি কিছু অবশেষ থাকে? এর সঙ্গে নদীর বুকে রাস্তা তৈরি করে ও মাটি কেটে নদীর শেষকৃত্যের সব আয়োজনই করা হয়েছে। এর দায় নদী রক্ষা কমিশন, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকেও নিতে হবে। আমরা চাই পদ্মা নদীর ওই চর থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ হোক।