পরিবহনভাড়া বাড়িয়েও নৈরাজ্য

সম্পাদকীয়

ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরিবহনমালিকদের ইচ্ছাই গুরুত্ব পেয়েছে, আবার সেটিই তাঁরা মেনে চলছেন না। যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার থেকে ভাড়ার পূর্ণাঙ্গ তালিকা সব গণপরিবহনে টানানোর কথা থাকলেও এখনো সেটি হয়নি। অন্যদিকে, সিএনজিচালিত পরিবহনগুলোও বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির বোঝার সঙ্গে যাতায়াতের ব্যয় বাড়লই, এরপরও এমন সব নৈরাজ্যের ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে মানুষকে। মহামারিতে বিপর্যস্ত জনজীবনে একটুও স্বস্তির জায়গা নেই কোথাও।

গণপরিবহনের সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলেও আদায় করা হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। গত মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাড়তি ভাড়া আদায় এবং যাত্রীভোগান্তির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানালেও কোনো কাজ হয়নি। বাড়তি ভাড়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তিও দিচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। আজ বৃহস্পতিবার থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ অভিযান শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু সেই অভিযান কয় দিন চলবে বা কী ফলাফল দেবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া কঠিন।

নানা গোঁজামিল করে নিজেদের সর্বোচ্চ সুবিধাটুকু সরকার থেকে আদায় করে নিয়েছেন পরিবহননেতা ও মালিকেরা। ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে চালক-শ্রমিকদের নির্দিষ্ট বেতন ও বোনাসের বিষয় যুক্ত করা হলেও সেগুলো আদতে মানা হয় না। রাস্তায় সেই চালক-শ্রমিকদের সঙ্গেই তর্কাতর্কি, এমনকি হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়েন যাত্রীরা। এবারও প্রতিবাদ করে রেহাই পাচ্ছে না মানুষ, জোর করে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কথা হচ্ছে চালক-শ্রমিকদের জন্য যে বেতন-বোনাস নির্ধারণ করা হয়, সেটি কিন্তু যাত্রীদের ভাড়া থেকে ঠিকই তোলা হয়, কিন্তু কেন তাঁরা সেটা পাবেন না?

সিএনজিচালিত বাসে স্টিকার লাগানোর নির্দেশ দিয়েছে বিআরটিএ। বাসে স্টিকার লাগানো হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করবে বিআরটিএ। কিন্তু তারা তো সিএনজিচালিত বাসের প্রকৃত সংখ্যা বা এগুলো কোন কোন পথে চলাচল করে, তা স্পষ্ট করেনি। ঢাকা থেকে নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, মাওয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লাসহ কম দূরত্বের অনেক রুটেই সিএনজিচালিত বাস চলাচল করে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম এবং দূরপাল্লার পথে গ্যাসচালিত বাসেও বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলছেন, সিএনজিচালিত বাস চিহ্নিত করা যাত্রীদের জন্য কষ্টকর। এ কারণে স্টিকার লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ স্টিকার না লাগালে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে বিআরটিএ দপ্তরে থাকা সিএনজিচালিত যানের তথ্য ধরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা দেখতে চাই তাঁরা কতটা কী করেন।

ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ দাবি করেছেন, রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় চলাচলরত ৬ হাজার বাসের মধ্যে ১৯৬টি সিএনজিচালিত, শতকরা হিসাবে যা ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। এর বাইরে আরও সিএনজিচালিত বাস আছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে সমিতি। কিন্তু সেটি আদৌ হবে কি না? তিনি সিটিং ও গেটলক সার্ভিস বন্ধ করা হবে বলেও জানিয়েছেন। সেটিও আদৌ কার্যকর হবে কি না আমরা সন্দিহান। আগেও এসব সার্ভিস বন্ধের দাবি উঠলেও গলাকাটা ভাড়া আদায়ের জন্য সেগুলো ঠিকই চালু রাখেন মালিকেরা।

ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির মধ্যে জনস্বার্থের বিষয়টি চিন্তা করেননি সরকারি নীতিনির্ধারকেরা। এখন ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে অন্তত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি। বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ, সিটিং-গেটলক সার্ভিস বন্ধ, সিএনজিচালিত যানে স্টিকার লাগানোর বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হোক।