পানিতে ডুবে মৃত্যু

সম্পাদকীয়

যে পানি মানুষের জীবন বাঁচায়, কখনো কখনো সেই পানিই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে দিনে ৪০ জন পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার খবর খুবই উদ্বেগজনক। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিবছর পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই।

প্রথম আলোর বরিশাল প্রতিনিধির পাঠানো খবর থেকে জানা যায়, বরিশাল বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৯টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। বেসরকারি সংস্থা সমষ্টি গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যে জরিপ করেছে তাতে দেখা যায়, গত বছর ৪২৫টি ঘটনায় ৭৭৯ জন পানিতে ডুবে মারা যায়, যার ৮২ শতাংশই শিশু। বয়সভেদে ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুরাই সবচেয়ে বেশি মারা গেছে। বিভাগের ছয় জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা পটুয়াখালীতে ১৭; পিরোজপুরে ১২, বরিশালে ১১, ভোলা ও ঝালকাঠিতে ৮ জন করে এবং বরগুনায় ৩ জন। তবে এই হিসাবই চূড়ান্ত নয়। অনেক মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমেও আসে না।

উদ্বেগের বিষয় হলো শিশুমৃত্যুর জন্য দায়ী বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধকে বৈশ্বিকভাবে এসডিজির অন্তর্ভুক্ত করা হলেও পানিতে ডুবে মৃত্যুকে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত করা হয়নি। ফলে অসুস্থতার কারণে শিশুমৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হলেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার কমছে না। পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে সকাল নয়টা থেকে বেলা দুইটার মধ্যে। এ সময় মায়েরা সাংসারিক নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। বাবারা কাজের জন্য বাড়ির বাইরে যান। গ্রামে সন্ধ্যার দিকে হাত-মুখ ধুতে গিয়েও ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাঁতার শেখালে ৯৫ শতাংশ মৃত্যু কমানো সম্ভব। বিশেষ করে যেসব মা ঘরের বাইরে কাজ করেন, তাঁদের শিশুসন্তানদের নিরাপদ স্থানে রাখার ব্যবস্থা করলে পুকুরে বা ডোবায় ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অনেক কমবে। আবার অনেক কিশোর-তরুণ ভালোমতো সাঁতার না জেনেই নদী বা সৈকতে নামে, যা প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কয়েক বছর আগে জার্মানির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া প্রতিরোধে একটি সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়েছিল। এ ধরনের কর্মসূচি আরও বাড়াতে হবে। খেলার স্কুলের মতো পাড়ায় পাড়ায় সাঁতারের স্কুল প্রতিষ্ঠা করে শহর ও গ্রামের প্রতিটি শিশুর সাঁতার শেখা নিশ্চিত করতে হবে।