পীরগঞ্জে গ্রেপ্তার–আতঙ্ক

প্রাণহীন নির্বাচনে ঘটছে একের পর এক প্রাণহানি। এবারের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ। মূলত ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও বিদ্রোহীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাকাল তৃণমূল পর্যায়ের এ নির্বাচন। এ ছাড়া এলাকার প্রভাবশালী প্রার্থীরাও মাঠ ছাড়তে রাজি নন। অনিবার্য হয়ে পড়ছে সহিংসতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন। ফলে ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সহিংসতার পর গ্রেপ্তার–আতঙ্কে গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়ার ঘটনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এ কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় থানা ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করেছে মানুষ।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত ২৮ নভেম্বর উপজেলার বৈরচুনা ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন রাতে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপদের ফল ঘোষণার পর একটি কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর উত্তেজিত জনগণ হামলা চালায়। এ ঘটনায় ১০ জনের নামে এবং অজ্ঞাতনামা ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এরপর থেকে আসামি ধরার নামে গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। শুক্রবার উপজেলার ছয়টি গ্রামের দুই শতাধিক বাসিন্দা আড়াই ঘণ্টা ধরে থানা ঘেরাও করেন।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, পুলিশ প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের না ধরে গ্রামের নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছে। রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষকে ধাওয়া করছে। ফলে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামগুলো। পরিবারের দৈনন্দিন কাজে পুরুষের উপস্থিতি না থাকায় নানা দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। যদিও পীরগঞ্জ থানার ওসি বলছেন, তদন্ত করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সেখানকার আরেকটি ইউনিয়ন খনগাঁওতেও একই ধরনের পরিস্থিতি দেখতে পাই। সেখানে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে সহিংস বিক্ষোভ, হামলা ও বিক্ষোভের ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তিনজন নিহত হন। এরপর অজ্ঞাতনামা ৭০০ জনকে আসামি করে মামলা হওয়ার পর থেকেই পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে সাতটি গ্রাম। গ্রেপ্তার-আতঙ্কে মানুষ বাড়ি ছেড়ে অন্য এলাকায় পালিয়ে যায়। গ্রামের দোকানপাটও বন্ধ থাকে। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। ফলে এসব সহিংসতার দায় তাদেরই নিতে হবে। পুলিশের গুলিতে মানুষ মরবে, আবার মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হবে, কোনোভাবে সেটি কাম্য নয়। খনগাঁওয়ের মতো বৈরচুনা ইউনিয়নেও শান্তি ফিরে আসুক।