পুলিশের গাফিলতি মেনে নেওয়া যায় না

সম্পাদকীয়

কৃষি উৎপাদনে কৃষকদের প্রতিবন্ধকতার শেষ নেই। অনেক সময় উৎপাদনের খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হয়। এর মধ্যে জয়পুরহাটের কৃষকদের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ফসলি মাঠ থেকে গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা। গত এক বছরে ১২০টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। আরও ভয়াবহ হচ্ছে, বৈদ্যুতিক মিটার খুলে নিয়ে আটকে রেখে টাকা আদায়ের ঘটনা ঘটেছে বিপুল পরিমাণে। অথচ পুলিশ কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি। চোরেরাই বড় গলায় বলছে, ‘নেতা-পুলিশ আমাদের পকেটে থাকে।’ এতে কি পুলিশের তৎপরতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় না?

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও গভীর নলকূপ মালিক সমবায় সমিতির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একই সময়ের মধ্যে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের চেয়ে মিটার জিম্মির ঘটনা দুই থেকে তিন গুণ বেশি। অনেকেই মিটার রাখার স্থানে পাওয়া মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করে বিকাশে টাকা পাঠিয়ে মিটার ফেরত পেয়েছেন। আবার কেউ টাকা দিয়েও মিটার ফেরত পাননি। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চোরদের আটক ও চুরি যাওয়া একটি ট্রান্সফরমারও উদ্ধার করতে পারেনি। তবে আটক করা হয়েছে দু-একজন মিটার চোরকে। সেটিকেই আবার ব্যবস্থা গ্রহণ হিসেবে দেখছে পুলিশ প্রশাসন।

চুরি যাওয়া এসব বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ৫ ও ১০ কেভি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন। ৫ কেভির দাম ৩৫ হাজার টাকা আর ১০ কেভিরটা ৬৫ হাজার। প্রথমবার চুরির ঘটনা ঘটলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৫০ শতাংশ দামে ট্রান্সফরমার সরবরাহ করে। দ্বিতীয়বার চুরির ঘটনা ঘটলে পুরো টাকা গ্রাহককে বহন করতে হয়। প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ভুক্তভোগী কৃষকের কাছে মিটার চোরের কল রেকর্ডও সংরক্ষিত আছে। এরপরও মিটার চুরি বন্ধ করতে পারছে না পুলিশ। জেলা গভীর নলকূপ মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আইনজীবী নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ট্রান্সফরমারের চেয়ে বেশি চুরি হয়েছে মিটার। মুঠোফোন নম্বর থাকার পরও কেন চোরেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে, তা বোধগম্য নয়। কার বিকাশ নম্বরে টাকা গেল, কার মুঠোফোনে কথা হলো তা প্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা হচ্ছে না।

জয়পুরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, চুরির ক্ষেত্রে মামলা হলে গুরুত্বসহকারে দেখা হয়। তবে মিটার চোরদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের অভিযোগ ও পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁর এ বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সত্যিকার অর্থেই তাঁরা যদি ব্যবস্থা নিতেন, চোরদের এ দৌরাত্ম্য আমরা দেখতাম না। আমরা সন্দিহান, এসব চুরির ঘটনায় অসাধু কর্মকর্তাদেরও যোগসাজশ থাকতে পারে। আমরা পুলিশের আর গাফিলতি দেখতে চাই না। মিটার চুরি বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।