পুলিশ নিয়ে এসব অভিযোগ কাম্য নয়

সম্পাদকীয়

বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, পুলিশ ছুঁলে ছত্রিশ ঘা—এই বাংলা প্রবাদবাক্যের কথা কে না জানে। বিপদে-আপদে পড়ে থানায় বা পুলিশের কাছে গেলে মানুষের আশ্বস্ত হওয়ারই কথা। কিন্তু তা কতটুকু হয়, সেই বিষয়টিকেই তুলে ধরে যুগ যুগ ধরে প্রচলিত এই প্রবাদবাক্য। কোনো অপরাধকর্মের সঙ্গে যুক্ত না থেকেও পুলিশি হয়রানির মুখে পড়া যেন এখন দেশে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অনেক সময় চাঁদাবাজি করা বা টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে এসব করা হয়। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর এলাকার তিন থানার ছয় পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। চাহিদামতো টাকা না পেয়ে তঁারা কাউকে মাদক, আবার কাউকে মানব পাচারের মামলায় জড়িয়েছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রূপনগর, পল্লবী ও দারুস সালাম থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি করে না পাওয়ায় মামলা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ এনেছেন পাঁচ ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে তিনজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে আছেন ব্যবসায়ী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও ভাড়ায় চলা মোটরসাইকেলের চালক ও যাত্রী। গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এসব ঘটনা ঘটে। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশের মিরপুর বিভাগ। উল্টো পুলিশ সদস্যদের কাছে থেকে চাঁদা না পেয়ে এমন অভিযোগ করা হয়েছে বলে দাবি করে তারা।

রূপনগরের রিকশার ব্যবসা করা দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভোগা এক নারীর ঘরে চোরাই মুঠোফোন থাকার অভিযোগে তল্লাশি চালিয়ে টাকা লুট করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানালে উল্টো সেই নারীর বিরুদ্ধে মানব পাচারের মামলা দেওয়া হয়। রূপনগরের আরও একটি ঘটনায় ইয়াবা আছে বলে তল্লাশি করে গাঁজা রাখার অভিযোগে মামলা করে পুলিশ। সেই ঘটনায় ওই ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পেলেও পুনরায় মিথ্যা মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ দুই ঘটনাতেই অভিযোগ উঠেছে রূপনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে।

পল্লবী থানায় তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে না পাওয়ায় এক ব্যক্তিকে পুলিশ মাদক (হেরোইন) মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মুঠোফোন মেরামতের দোকান চালানো ওই ব্যক্তির পরিবার এখন দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। দারুস সালামে একইভাবে মাদকের মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে দুই ব্যক্তিকে। স্বজনেরা টাকা দিলেও মামলা থেকে রেহাই পাননি তাঁরা।

পুলিশের চাঁদাবাজির বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে মাদক। এসব ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগও আছে। রাস্তায় পুলিশের তল্লাশির মুখে পড়া এখন রীতিমতো আতঙ্কের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বেশির ভাগ সময় ভুক্তভোগীরা সামাজিকভাবে সম্মানহানি ও পুলিশি হয়রানির কারণে চুপ মেরে যান। মিরপুর এলাকার পাঁচ ব্যক্তিকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাতে হয়, তাঁরা হাল ছেড়ে না দিয়ে ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে দ্বারস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে একটি ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ডিবি পুলিশ। আমরা আশা করব, বাকি ঘটনাগুলোর তদন্ত হবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একজন নিরপরাধ মানুষ ঘর থেকে কাজে বের হয়ে আচমকা পুলিশের সামনে পড়ে অপরাধী হয়ে যাবে, এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মামলার হাজিরা ও দিনের পর দিন আদালতে দৌড়াতে গিয়ে সময় ও অর্থ ব্যয়ে জর্জরিত হতে হয় তাদের। এসব ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ পাওয়া তো দূরের কথা, দায়মুক্তি পাওয়াটাই দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। আমরা এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশি কার্যক্রম মনিটরিংয়ের সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীলদের আরও কার্যকর ভূমিকায় দেখতে চাই।