বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় লাখ লাখ শিক্ষার্থীর যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। আর্থসামাজিক কারণে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কীভাবে এই ক্ষতি পূরণ করা যাবে, তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, সুবিধাজনক সময় এলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। একই সঙ্গে তিনি ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনতে বলেছেন। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি আছে। করোনার সংক্রমণ কমলেই খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন প্রস্তুতি নেই। গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তা সংযোজন-বিয়োজনের প্রয়োজন কি না, তার পর্যালোচনাও করা হয়নি। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান অবশ্য বলেছেন, তাঁরা প্রস্তুত। সরকারের সিদ্ধান্ত এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।

বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা বলছে, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হলে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থান, অবকাঠামো, শিক্ষার্থী ও শ্রেণিসংখ্যার ভিত্তিতে প্রস্তুতি নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই রকম প্রস্তুতি নিলে হবে না। ঢাকাসহ বড় বড় শহরেই জনাকীর্ণ এলাকায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। সেসব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি আরও কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

অনেক বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারক মনে করেন, করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে এই হার ২০ শতাংশের কাছাকাছি। কিছুদিন আগেও এটি ৩০ শতাংশের ওপরে ছিল। তবে সংক্রমণের হারের যথার্থতা নিয়ে বিতর্কও আছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে সংক্রমণের হার নির্ধারিত হচ্ছে করোনা উপসর্গ নিয়ে, যাঁরা হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যান, তাঁদের পরীক্ষার ভিত্তিতে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে পরীক্ষা করলে প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া যেত। অতএব, সংক্রমণের হারের দোহাই দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কোনো যুক্তি নেই। এ সংক্রমণের মধ্যেই সরকার সবকিছু খুলে দিয়েছে। সমাজজীবনের সবকিছু স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা আছে। তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্বাভাবিকতা আর কত দিন চলবে?

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এরপর পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াই সমীচীন হবে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার প্রস্তুতি এখনই নিতে হবে। এরপর উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলে দিতে হবে। সবশেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরকার আগামী নভেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। হাতে সময় আছে মাত্র দু-তিন মাস। সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দিলে তা সম্ভব হবে না।

তাই আর বিলম্ব না করে এখনই প্রস্তুতি নিন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যন্ত কত শিক্ষার্থীকে কত দিনে টিকা দেওয়া যাবে, সে সম্পর্কে একটি রূপরেখা তৈরি করুন। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি এর উপকরণও সরবরাহ করতে হবে। গত দেড় বছরে শিক্ষার বিরাট ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি বাড়তে দেওয়া ঠিক হবে না।