বরাদ্দ দিন, বিদ্যালয়টি রক্ষা করুন

সম্পাদকীয়

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা ১১ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর বারবার আবেদন করেও সুরাহা না হওয়ায় বিদ্যালয়টির শিক্ষকেরা অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ায় এবং এমপিওভুক্তির সুযোগ থাকার পরও সে ব্যাপারে উদ্যোগ না নেওয়ায় বিদ্যালয়টিতে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির প্রাথমিক ও মাধ্যমিক—দুটি শাখাই চালু আছে। পরবর্তী সময় প্রাথমিক শাখা জাতীয়করণ করা হলেও মাধ্যমিক শাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ায় সেখান থেকেই প্রতি অর্থবছরে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হতো।

শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন সেই বরাদ্দ থেকেই আসত। কিন্তু গত অর্থবছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ায় বেতন পাচ্ছেন না তাঁরা। এ অবস্থায় শিক্ষকেরা তাঁদের পরিবার নিয়ে আর্থিক অনটনের মধ্যে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন। শিক্ষা কার্যক্রম ঠিকমতো না চলায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় ছাড়ছে।

আন্দোলনরত শিক্ষকদের অভিযোগ, কয়েক বছর আগেও বিদ্যালয়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। শুধু প্রধান শিক্ষকের অদক্ষতার কারণে বিদ্যালয়টি এ অবস্থায় পড়েছে। এমপিওভুক্তির সুযোগ থাকলেও প্রধান শিক্ষক তা করেননি। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করার জন্য আবেদন করা হয়েছে।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ জানিয়েছেন, সারা দেশে মোট ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিদ্যালয় আছে। সব কটিতেই বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। যার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বেতন পাচ্ছেন না। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের ওপর। মঞ্জুরি কমিশন এ বিষয়ে একটা কমিটি করেছে। তাঁর আশা, দ্রুত সমস্যাটার সমাধান হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিদ্যালয় থাকবে কি না, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্ত। সেটা বাস্তবায়ন করতে গেলে অধিভুক্ত বিদ্যালয়গুলো কীভাবে এমপিওভুক্ত হবে, তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে। একটা প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় যে সংকটের মুখে পড়ল, তার দায় কে নেবে? মূল্যস্ফীতির চাপে জনজীবনে যখন নাভিশ্বাস উঠছে, সে সময়ে ১১ মাস ধরে একটা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বন্ধ, এর চেয়ে মানবিক সংকট আর কী হতে পারে। বরাদ্দ দিন, বিদ্যালয়টি রক্ষা করুন, মানবিক সংকট থেকে শিক্ষকদের বাঁচান।