বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত আনা হোক

সম্পাদকীয়

গত রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আফগানিস্তানে থাকা বাংলাদেশিদের এক সপ্তাহের মধ্যে ফেরত আনার ব্যাপারে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে, তার বাস্তবায়নই প্রত্যাশিত। সরকারি হিসাবে আফগানিস্তানে ২৯ জন বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন, যাঁরা টেলিযোগাযোগসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ব্র্যাক বহু বছর ধরে সুনামের সঙ্গে আফগানিস্তানে উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছে। দেশটির সবচেয়ে বড় মুঠোফোন প্রতিষ্ঠান আফগান ওয়্যারলেসে প্রায় দুই দশক ধরে শীর্ষস্থানীয় পদগুলোতে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি প্রকৌশলী।

কিন্তু ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানে আশরাফ গনি সরকারের বিদায় এবং তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তালেবানের পক্ষ থেকে বিদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হলেও নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। এখনো তারা সরকার গঠন করেনি। ফলে তাদের রাষ্ট্রীয় নীতি-পরিকল্পনা কী হবে, তা স্পষ্ট নয়। এ অবস্থায় সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক এবং দেশে থাকা তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা থাকা স্বাভাবিক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুরু থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত নিয়ে আসার ব্যাপারে কূটনৈতিক প্রয়াস চালিয়ে আসছে। আশার কথা, আফগানিস্তানে থাকা পাঁচজন বাংলাদেশি গত রোববার কাবুল ত্যাগ করেছেন, যার মধ্যে তিনজন জাতিসংঘের ও দুজন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনায় যে দুই বাংলাদেশি কাবুল ছেড়েছেন, তঁারা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে কাজ করতেন। আফগান-উজবেক সীমান্ত বন্ধ থাকলেও বিমান যোগাযোগ চালু আছে।

উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ দূতাবাস কয়েক বছর আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সেখানকার কূটনৈতিক বিষয়াদি দেখভাল করে থাকে। আফগান সংকট শুরু হওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেখানে আফগানিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশি নাগরিকদের তাসখন্দে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। উজবেকিস্তানে দায়িত্বরত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, উজবেকিস্তানের কাছে বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে যে ট্রানজিট চাওয়া হয়েছিল, তাতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। উজবেক সরকার এক ঘণ্টার মধ্যে দুই বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে। কাবুলে থাকা বাকি বাংলাদেশিরা উজবেকিস্তান হয়ে দেশে ফিরতে চাইলে ভিসার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। তবে আফগানিস্তানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে কেউ কেউ এ মুহূর্তে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক নন বলে জানিয়েছেন। তাঁরা আরও কিছুদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চান।

১৫ আগস্ট কাবুলে তালেবান প্রবেশের পর বাংলাদেশ সরকার তড়িঘড়ি করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের যে নীতি নিয়েছে, তা বাস্তবসম্মত। আফগানিস্তানের বিষয়ে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না, যা আমাদের জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করতে কিংবা ভূরাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

আমরা আশা করি, সরকারের এ প্রত্যাবাসন কূটনীতি সফল হবে এবং আফগানিস্তান থেকে ফেরত আসতে আগ্রহী সব নাগরিকই নিরাপদে দেশে ফিরে আসতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কুশলী ও জোরালো কূটনৈতিক প্রয়াসই কাম্য।