বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর কতকাল এভাবে চলবে

সম্পাদকীয়

সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন, তখনই অপর দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শহীদুর রহমান খান এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রুস্তম আলী—দুজনের বিরুদ্ধেই স্বজনপ্রীতি, বিধি উপেক্ষা করে পরিবারের সদস্যদের নিয়োগের অভিযোগ এসেছে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত প্রতিবেদনে উপাচার্যের অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় মেয়েকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন, স্ত্রীকে সরাসরি অধ্যাপক পদে নিয়োগের প্রক্রিয়াটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় আটকে দিয়েছে। এ ছাড়া নিজের ছেলে, শ্যালক ও চার ভাতিজাকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। উপাচার্য নিজেও তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন, নিকটাত্মীয়দের নিয়োগ দেওয়া ঠিক হয়নি।

অন্যদিকে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মেয়াদের শেষ সময়ে এসে ১০২ জনের নিয়োগ ও পদোন্নতি চূড়ান্ত করতে বোর্ড সভায় উত্থাপন করলে কয়েকজন সদস্য আপত্তি করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি সভা স্থগিত ঘোষণা করেন। এ খবর পেয়ে পদোন্নতির জন্য অপেক্ষমাণ শিক্ষক ও কর্মকর্তারা তাঁকে অবরুদ্ধ করেন। তাঁর বিরুদ্ধেও ভাতিজিকে নিয়মবহির্ভূতভাবে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ আছে।

মেয়াদের শেষবেলায় উপাচার্যরা নিয়োগ–পদোন্নতির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন কেন? এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুস সোবহান মেয়াদের শেষ দিন ৪২ জনকে নিয়োগ দেন, যা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উপাচার্যদের আত্মীয়স্বজন কি এতই অযোগ্য যে তাঁর নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ না পেলে চাকরি হবে না। সরকার তাঁকে উপাচার্য পদে বসিয়েছে নিজের লোকদের কর্মসংস্থানের জন্য নয়, বিশ্ববিদ্যালয়টি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য। সেই কাজ কজন উপাচার্য ঠিকঠাকমতো করেছেন, সেটি প্রশ্ন বটে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ উপাচার্য বিদায়বেলায় কোনো না কোনো অঘটন সৃষ্টি করে যান। এতে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় তা নয়, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাও ব্যাহত হয় অনেক সময়। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদ হলেও তিনি একজন শিক্ষক। অতএব শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে তাঁর যে সম্মানজনক স্থান, সেটি রক্ষা করা জরুরি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো একটি পদের নিয়োগপ্রক্রিয়া আটকে দিলেই হবে না, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে গুরুতর যেসব অভিযোগ এসেছে, এর প্রতিটি তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। পাবনার ঘটনায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা উপাচার্যকে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর স্থানীয় সাংসদের হস্তক্ষেপে তাঁকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে হয়। এটি যেকোনো উপাচার্যের জন্য অসম্মানজনক। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজেই স্বীকার করেছেন, তিনি অন্যায় করেছেন। এরপর তাঁর ওই পদে থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।

জনগণের করের অর্থে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কোনো উপাচার্য বা পদাধিকারীর বাপ–দাদার তালুক নয় যে তিনি যা খুশি করবেন। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্থাপিত অভিযোগ প্রয়োজনে আরও উচ্চপর্যায়ে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।