বোরো উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগ

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ভাত। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যে ক্যালরি যুক্ত হয়, তার ৭৭ ভাগই আসে ধান বা চাল থেকে। ধান থেকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১১ ভাগ আসে। বাংলাদেশে বছরে যে পরিমাণ ধানের চাহিদা, তার ৫৬ ভাগই বোরো মৌসুমে উৎপাদিত হয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ মোকাবিলা করে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বোরোর উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বরিশাল আঞ্চলিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে বোরোর আবাদ বৃদ্ধিবিষয়ক একটি সেমিনারে উঠে এসেছে, সেচ ও উন্নত মানের বীজ সরবরাহ করা গেলে বরিশাল অঞ্চলে বোরো ধানের উৎপাদন অনেক গুণ বাড়ানো সম্ভব। তবে এ বিভাগে বোরো উৎপাদনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা সেচসুবিধার অভাব ও মাটির লবণাক্ততা। সারা দেশে যেখানে জাতীয়ভাবে সেচসুবিধার আওতায় থাকা জমির পরিমাণ ৭৩ শতাংশ, সেখানে বরিশাল অঞ্চলে এর পরিমাণ মাত্র ২৭ শতাংশ।

সেমিনারে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বরিশাল অঞ্চলে বোরো আবাদ সম্প্রসারণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। দেশের অন্য অঞ্চলে বোরো আবাদের জন্য জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়ে গেছে। কিন্তু বরিশাল বিভাগে তা হয়নি। এ অঞ্চলে বোরোর আবাদ বাড়াতে সেচ সম্প্রসারণ করতে হবে। এ ছাড়া কৃষকের কাছে উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ করতে হবে।

দেশের অন্যতম ধানভান্ডার বরিশাল। কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অনাবাদি জমির পরিমাণ ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। এ বিভাগের কয়েকটি জেলা উপকূলবর্তী। মাটির লবণাক্ততার কারণে আমন মৌসুমে একবারই সেখানে ধান চাষ হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা লবণসহিষ্ণু উচ্চফলনশীল বোরো ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। বরিশাল অঞ্চলে বোরো ধানের আবাদ বাড়াতে এ ধরনের জাত খুব ভালো ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

একসময় দেশে বোরোর আবাদ কম হতো। কিন্তু সেচব্যবস্থা প্রবর্তন এবং এর আধুনিকায়নের ফলে আবাদ বাড়তে থাকে। এর সঙ্গে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন ফলন অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে উৎপাদনের দিক থেকে একসময় তৃতীয় অবস্থানে থাকা বোরো প্রথম অবস্থানে উঠে এসেছে।

অক্টোবর-নভেম্বর থেকে এপ্রিল-মে পর্যন্ত বোরোর মৌসুম। এ সময়ে বৃষ্টি কম হওয়ায় এ ধানের উৎপাদন সেচের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। বরিশাল বিভাগে বোরো উৎপাদন বাড়ানোর যে সুযোগ রয়েছে, ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা সুরক্ষিত করার জন্য সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। বোরোর উৎপাদন বাড়াতে বরিশাল বিভাগে সেচসুবিধা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া মাটির লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা এবং লাগসই বীজ নির্বাচন করতে হবে। কৃষকদের বোরো আবাদে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। সর্বোপরি বরিশাল বিভাগকেন্দ্রিক একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।