ভোক্তারা স্বস্তি পাবেন তো?

সম্পাদকীয়

বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি স্বস্তির খবর দিয়েছে। এখন থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে কোনো শুল্ক দিতে হবে না। আগে ৫ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হতো। এ আদেশ বহাল থাকবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ ছাড়া এনবিআর চিনি আমদানিতেও আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। আগে আমদানি শুল্ক ছিল ৩০ শতাংশ। ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানি পর্যায়ে কম হারে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক দিতে হবে।

এর আগে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন পেঁয়াজ ও চিনির ওপর শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছিল। পরে পেঁয়াজ, চিনি ও ভোজ্যতেলে শুল্ক-কর কমানোর জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে গত সোমবার আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হলে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এনবিআর পেঁয়াজে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছিল। তখন শুল্ক প্রত্যাহারের মেয়াদ ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এপ্রিল মাস থেকে ফের পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ পুনর্বহাল করা হয়।

তবে আমদানি শুল্ক কমানো বা প্রত্যাহারের আগেই বাজারে পেঁয়াজের দাম কমার খবরটি ভোক্তাসাধারণের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক। সেই সঙ্গে কমেছে কাঁচা মরিচের দামও। প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। আগে যে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হতো, বৃহস্পতিবারের বাজারে তা বিক্রি হয় ৭০ টাকায়। অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও কমেছে কেজিতে ৫ টাকা। বৃহস্পতিবার ঢাকার বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি দরে। সপ্তাহখানেক আগে এ দাম উঠেছিল ২০০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো বাড়তির দিকে।

বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল শুল্ক কমিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা যাবে না। এ পদক্ষেপ সাময়িক সুবিধা দিতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানিসহ প্রায় সব পণ্যের দামই বেড়েছে, যার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব দেশীয় বাজারেও পড়তে বাধ্য। আমদানিকারকেরা ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর আরজি আগেই জানিয়ে রেখেছেন। তাঁদের যুক্তি হলো বিদেশ থেকে বেশি দামে কিনে এনে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন যে গত এক বছরে ভোজ্যতেলের দাম কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে চাল, আটাসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দামও।

এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, বাজার তদারক বাড়ানো; দ্বিতীয়ত, বিকল্প ব্যবস্থাপনায় চাল, আটা, চিনি, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সীমিত আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছানো; বিশেষ করে করোনাকালে যাঁদের আয় কমে গেছে। সেই সঙ্গে খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাও বাড়াতে হবে। গ্রাম ও শহরাঞ্চলের গরিব মানুষ যাতে খেয়ে–পরে বাঁচতে পারে, সে জন্য ভোগ্যপণ্যের দাম যেমন কমাতে হবে, তেমনি তাদের আয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করতে হবে। করোনার কারণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছিল। এটি আবার পুরোদমে শুরু করতে হবে।