ধান, গমের মতোই শর্করার বড় উৎস আলু। অথচ আলু চাষে কৃষকের উৎপাদন খরচ না ওঠা, বাজারে দাম পড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের লোকসান—এমন সব নেতিবাচক খবরেই ভরে থাকে সংবাদমাধ্যমের পাতা। এর মধ্যেই কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আশার আলো দেখাচ্ছে আলু। কেননা স্বল্প পরিসরে হলেও এখন রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়ন ও পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়ন থেকে মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে আলু রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এবার রংপুর জেলায় ৫১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে, যা গতবারের তুলনায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর বেশি।
বিভিন্ন দেশ থেকে আলু কেনার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, এবার রংপুর থেকে আলু রপ্তানির পরিমাণ ৫০ হাজার টনের কাছাকাছি পৌঁছাবে। রংপুর বিভাগ থেকে বিদেশে আলু রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে পীরগাছা উপজেলা। গত বছর এ উপজেলা থেকে সাড়ে ৬০০ মেট্রিক টন আলু বিদেশে রপ্তানি হয়েছিল। এবার সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন আলু রপ্তানি করা হবে।
এ বছর রংপুর জেলার ৪০০ আলুচাষিকে উন্নত আলু চাষের জন্য প্রশিক্ষণ ও উন্নতমানের বীজ সরবরাহ করা হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, নেপাল ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় আলু রপ্তানি শুরু হয়েছে। আলু রপ্তানির এ সুযোগ কৃষকদের মুখেও হাসি ফোটাতে শুরু করেছে। এর ফলে এ বছর কৃষকেরা খেত থেকে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করতে পারছেন ১২ থেকে ১৪ টাকা কেজিতে। গত বছর এ দাম ছিল অর্ধেক।
মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলুর বড় বাজার রয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এসব দেশে আলুসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে এ ক্ষেত্রে নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। আলুর রপ্তানি বৃদ্ধি ও বিদেশে বাজার ধরে রাখতে হলে উন্নতমানের বীজ সরবরাহ থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে বেশিসংখ্যক কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া ও তাঁদের উন্নত বীজ সরবরাহ করতে হবে।
দেশের চাহিদা মিটিয়ে আলু রপ্তানির যে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সেটাকে আরও এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য কৃষক ও রপ্তানিকারকদের কেন্দ্রে রেখে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা করা প্রয়োজন।