মেহেরপুর ও রংপুরে এমন কার্যক্রম বন্ধ হোক

সম্পাদকীয়

নির্মাণকাজের অন্যতম প্রধান উপকরণ ইট। ফলে ইট তৈরির জন্য ইটভাটার প্রয়োজন আবশ্যকীয়। যেহেতু ইটভাটার কারণে পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ে, এর জন্য সরকারি নীতিমালাও আছে। একটি ইটভাটা নির্মাণের জন্য নিতে হয় সরকারের একাধিক কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতিও। কিন্তু তার কোনো কিছুই তোয়াক্কা না করে মেহেরপুর ও রংপুরে চলছে দুইি ইটভাটার নির্মাণকাজ। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকা এমনকি ফসলি জমির মধ্যে ইটভাটাগুলো বসানো হচ্ছে। পরিবেশ ও জনজীবন বিপর্যস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অবশ্যই গুরুতর অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু প্রশাসনের সামনে এভাবে চাইলে কি বেআইনিভাবে ইটভাটা নির্মাণ করা যায়?

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নে এক কিলোমিটারের মধ্যেই একটি হাসপাতাল, তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দুটি মসজিদ, একটি গির্জা, একটি বাজারের অবস্থান। এ ছাড়া চারপাশে ফসলি জমি ও জনবসতি। সেখানেই কিনা হতে চলছে ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, এভাবে ভাটা নির্মাণের জন্য ছাড়পত্র দেওয়ার বিধান নেই। অন্যদিকে ভাটামালিক বলছেন, ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এলাকাবাসী ইটভাটাটির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় বিষয়টি প্রকাশ্যে এল, নয়তো এভাবেই কি ভাটাটি নির্মাণ হয়ে যেত না? কী জবাব দেবে পরিবেশ অধিদপ্তর?

একইভাবে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট এলাকায় বিধিবহির্ভূতভাবে সবুজ ধানখেতের মধ্যে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। এই ভাটা বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী আন্দোলন করছেন। তবু নির্মাণকাজ চলছে বলে কৃষকদের অভিযোগ। তাঁদের আশঙ্কা, ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু করলে আশপাশের কৃষিজমিতে ধান, পাটসহ অন্য ফসলের ফলনে বিপর্যয় ঘটবে। এ ছাড়া নির্মাণাধীন ভাটার পাশে রয়েছে বিশাল আমবাগান। নির্মাণাধীন ভাটার মালিক বলছেন, ইটভাটা নির্মাণের অনুমোদন নিতে আবেদন করেছেন। আবার ঔদ্ধত্য নিয়ে এ–ও বলছেন, বিধি মেনে কোথাও কোনো ইটভাটা নির্মাণ করা হয়নি।

অন্যদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, তিনি নাকি নতুন ইটভাটা নির্মাণে কোনো ছাড়পত্র দেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, নতুন করে কৃষিজমিতে ইটভাটা নির্মাণের বিষয়ে তাঁর জানা নেই। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি দেখবেন। তার মানে, কেউ অভিযোগ না দিলে প্রশাসনের কিছু করার নেই? ছাড়পত্র না নিয়েই এমন একটি অবৈধ কাজ হচ্ছে, সেটি তাঁরা বসে বসে দেখবেন? একটা ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সামর্থ্য তাঁরা রাখেন না?