রংপুর মেডিকেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন

স্বাধীনতার পরের বছর রংপুর মেডিকেল কলেজে ১০টি লিফট স্থাপন করা হয়েছিল। ৫০ বছর ধরে সেবা দিতে দিতে লিফটগুলো জরাজীর্ণ তো হয়েছেই, সেগুলো এখন মৃত্যুফাঁদ বলাটাও অমূলক হবে না। লিফটের তলা নির্দেশক ডিসপ্লে নষ্ট হয়ে গেছে বহু আগে। দরজায় ধাক্কা দিয়ে চালককে ডাকতে হয়। প্রায় দিনই আটকে যায় কোনো না কোনো লিফট। ফলে সেগুলোতে উঠতে গিয়ে আতঙ্কের মধ্যে থাকেন সবাই। দেশের প্রায়ই মেডিকেল কলেজের লিফটের সেবা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। তার মধ্যে রংপুর মেডিকেল কলেজের লিফটগুলো সীমাহীন দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, এক হাজার শয্যার হাসপাতালটিতে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে প্রায় দ্বিগুণ। এর সঙ্গে রোগীর স্বজন, হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। সব মিলিয়ে পাঁচতলা ভবনের হাসপাতালে প্রায় চার হাজার মানুষ লিফট দিয়ে নিয়মিত ওঠানামা করেন। কিন্তু সেই লিফটগুলো যেন চলছে নামকাওয়াস্তে। চারটি তো দীর্ঘদিন ধরে বিকল। বাকি ছয়টি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেবা দেয়। বেলা দুইটার পর থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দুটি লিফট চলে। রাত আটটা থেকে পরদিন সকাল আটটা পর্যন্ত একটি লিফট চলে। এত বড় একটি হাসপাতালে এভাবেই চলছে লিফটগুলো। একজন লিফটচালক বলেন, প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে চার থেকে পাঁচবার লিফট মাঝপথে বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে। সর্বনিম্ন পাঁচ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টার বেশি লিফটে আটকে থাকার ঘটনাও ঘটেছে।

এ দেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে কেনাকাটা নিয়ে নানা অনিয়ম আমরা দেখি। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে দামি দামি যন্ত্রপাতি পড়ে থাকার ঘটনা নতুন কিছু নয়। সেখানে রংপুর মেডিকেল কলেজের লিফটের দুর্দশার চিত্র আমাদের অবাক করে না। কিন্তু চিকিৎসা নিতে বা দিতে এসে মানুষের এই ভোগান্তির অবসান ঘটবে কবে?

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, লিফটগুলো সংরক্ষণ ও মেরামতের দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের। এসব লিফট রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য গণপূর্ত বিভাগে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। আর গণপূর্ত বিভাগ রংপুর কার্যালয় জানাচ্ছে, লিফটগুলো সংস্কার করতে ঢাকায় এক মাস আগে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এখন সেই প্রস্তাব কখন পাস হবে, আমরা জানি না। লিফটগুলোর সংস্কার বা নতুন লিফট কেনার জন্য বরাদ্দও কখন হবে আমরা জানি না। আমরা শুধু জানতে চাই, লিফটের কোনো দুর্ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটলে এর দায় কে নেবে?