লক্ষ্মীপুর প্রশাসনের প্রশংসনীয় উদ্যোগ

সম্পাদকীয়

মানুষের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দিতে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু সেটি কতটুকু যথাযথভাবে হয়? অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়মমাফিক দায়িত্ব পালনই সেখানে গুরুত্ব পেয়ে থাকে। তবে অনেক জেলা-উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতা উল্লেখ করার মতো।

নিজস্ব তহবিলকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে উদ্যোগী হন তঁারা। যেমন লক্ষ্মীপুরের প্রশাসনের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পেলাম। সেখানকার জেলা প্রশাসন অ্যাম্বুলেন্স–সেবাকে ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত নিয়ে গেছে। এর জন্য একটি অ্যাপও তৈরি করেছে তারা। প্রয়োজনের মুহূর্তে স্বল্প খরচে তৎক্ষণাৎ অ্যাম্বুলেন্স পেয়ে যাচ্ছেন প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কারণে বেঁচে গেছে অনেক মরণাপন্ন রোগী।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া ‘স্বপ্নযাত্রা’ অ্যাপের মাধ্যমে ১০টি অ্যাম্বুলেন্স মানুষকে সেবা দিচ্ছে। গুগল প্লেস্টোর থেকে ডাউনলোড করে অ্যাপের মাধ্যমে ফোন দিলে অ্যাম্বুলেন্স মেলে সহজে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তহবিল থেকে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সগুলো কেনা হয়। অ্যাপটি বানাতে জেলা প্রশাসনের ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সগুলোর জন্য ১০ জন চালক নিয়োগ করা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ অ্যাম্বুলেন্সগুলোর তত্ত্বাবধান করছে। অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও তেল খরচ রোগী পরিবহনের আয় থেকেই মেটানো হয়। এখন আরও সাতটি অ্যাম্বুলেন্স কেনার প্রক্রিয়া চলছে।

গত ৯ মাসে ‘স্বপ্নযাত্রা’র অ্যাম্বুলেন্স ৩৫৮ জন রোগীকে অল্প ভাড়ায় বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে। প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স থেকে অর্ধেকের কম খরচে প্রয়োজনে জেলা-উপজেলা এমনকি ঢাকার যেকোনো হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা যাচ্ছে এখন। প্রশাসনের তরফ থেকে এমন সেবা পেয়ে সাধারণ মানুষ খুবই খুশি।

স্বপ্নযাত্রা নামের এ কার্যক্রমের মূল কারিগর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, গ্রামের মানুষ যেন শহরের সেবা পান। আর মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমানোর লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ নেওয়া। সেবা কার্যক্রমটি চালু করার পরপরই ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। সারা দেশে এ কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে পারলে মৃত্যুহার কমবে। এ উদ্যোগ স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশাবাদী তিনি।

স্বল্প খরচে অ্যাপভিত্তিক এ অ্যাম্বুলেন্স–সেবায় বেশি উপকৃত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। অটোরিকশা বা ইজিবাইকের বদলে অ্যাম্বুলেন্সে করে দ্রুত ও নিরাপদে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছেন তঁারা।

জেলা-উপজেলা প্রশাসনের তহবিলকে গণমানুষের উন্নয়নে ব্যবহারের দারুণ দৃষ্টান্ত বলা যায় এটিকে। আমরা লক্ষ্মীপুরের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই। অন্যান্য জেলা-উপজেলাতেও এমন কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ুক।