শাবাশ বাংলাদেশ!

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় এক জয়ের প্রতিচ্ছবি এখন বাংলাদেশের পতাকায়, বাংলাদেশের মানুষের গর্বিত মুখে। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা কথা রেখেছেন: বাংলাদেশ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে বীরত্বের সঙ্গে। এই বিজয়ে জাতীয় জীবনের রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনাও যেন খানিকটা কাটল। শাবাশ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
ক্রিকেটের জনক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজাত ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি করল ইতিহাস। বাংলাদেশ দল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হলো। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ব্যক্তিগত শতরান এল এই ম্যাচে। ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে বাংলাদেশ আগে পরাস্ত করলেও এবারের বিজয়ে প্রতিফলিত হয়েছে আত্মবিশ্বাস ও সংকল্প। মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং, মাশরাফির চৌকস নেতৃত্ব এবং সংকটের কিনারে দাঁড়িয়েও নির্ভুল নিশানা করা রুবেলের সংকল্প প্রমাণ করেছে, এই বিজয়ে ভাগ্যের চেয়ে বেশি অবদান ছিল যোগ্যতা ও চেষ্টার।
ক্রিকেটের পরাশক্তি হিসেবে বিবেচিত কয়েকটি দেশ চায়, বাংলাদেশের মতো দেশকে যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে বিশ্বকাপ আসরে আসতে হবে। সেই বড়াই গুঁড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ তার মর্যাদার প্রমাণ রাখল। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেতা দেশগুলোকে ধরাশায়ী করা বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেওয়ার দিন আর নেই। কাতরানো আর পথ হাতড়ানোর দশা পেরিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন দারুণ সাহসী। তবে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে বিতর্ক, পক্ষপাত ও শিথিলতা কাটাতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে।
খেলা শুধুই খেলা নয়; একটি দেশের সক্ষমতার চেহারাও খেলোয়াড়দের মরণপণ লড়াইয়ে প্রতিফলিত হয়। বাঙালির সুপ্ত শক্তির এমন উন্মেষ আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। তারই স্বীকৃতি মিলছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতি সমীহ জাগানো প্রতিবেদনে। পশ্চিম বাংলার বাঙালিদের মনেও ভালোবাসা ও গর্ব জাগাতে পেরেছে মাশরাফির দল।
অজস্র মৃত্যু ও সহিংসতায়ও যে জাতি এক হতে পারেনি, বিজয়ের উদ্যাপনে তারা এক এবং উদ্বেলিত। আন্দোলনরত বিরোধী জোট গতকাল মঙ্গলবারের হরতাল শিথিল করেছে বিজয়ের সম্মানে। তৃষিত জাতির তৃষ্ণা মিটিয়ে পরের বিজয়ের প্রস্তুতি চলুক। ক্রিকেট ঘিরে তৈরি ঐক্যের সংকল্প রাজনীতিতেও ছড়িয়ে পড়ুক।