শিক্ষার্থীদের টিকাদান

সম্পাদকীয়

সরকার দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, তাতে ১৩ কোটি মানুষকে ২৬ কোটি ডোজ টিকা দিতে হবে। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদেরও টিকার আওতায় আনায় এই সংখ্যা আরও বাড়বে। কিন্তু সরকারের সাধ ও সাধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক আছে বলে মনে হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চার কোটির বেশি মানুষ করোনা টিকার এক ডোজ পেয়েছেন, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। আর টিকার দুই ডোজ পাওয়া নাগরিকের সংখ্যা দুই কোটির বেশি। সব মিলিয়ে আট কোটির কাছাকাছি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে বা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে।

উন্নয়নশীল বিশ্বে টিকাদান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স বিভিন্ন দেশের টিকাদান পরিস্থিতির ওপর গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দিতে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডোজ টিকা লাগবে। কিন্তু বাংলাদেশে যে হারে টিকা দেওয়া হচ্ছে, তাতে এই বছরের শেষ নাগাদ ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া যেতে পারে। টিকা দেওয়ার হারে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে।

সরকার সম্প্রতি ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার যে কর্মসূচি নিয়েছে, আমরা মনে করি, তা ভালো উদ্যোগ; বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ভয়ভীতিতে আছেন। শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া সম্ভব হলে সেই ভয় অনেকটা কেটে যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে থেকে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলাম, যদিও সংশ্লিষ্টরা এত দিন উদাসীনতাই দেখিয়ে এসেছেন।

গত সোমবার রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীকে টিকাদান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলো। এর আগে ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের ১১২ জন স্কুলশিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে টিকা দেওয়া হয়েছিল। সোমবার টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানিয়েছেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হবে; যা খুবই জরুরি।

শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের লক্ষ্য হলো, ‘সব শিশু টিকা নেবে/ স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে যাবে’। কিন্তু সমস্যা হলো, এই মুহূর্তে আমাদের যে পরিমাণ টিকা প্রয়োজন, পাওয়া যাচ্ছে তার সামান্য অংশই। কোনো কোনো উৎপাদনকারী দেশ টিকাকে ভূরাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকা বণ্টনের ক্ষেত্রে যে ন্যায্যতার আহ্বান জানিয়েছে, তা–ও অনেক দেশ মানছে না। শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে হলে অবিলম্বে কয়েক কোটি টিকা সংগ্রহ করতে হবে, হোক তা আমদানি কিংবা উপহার হিসেবে।

আশার কথা, বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। তবে নতুন ধরন সম্পর্কে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। ইতিমধ্যে সীমান্তের ওপারে ডেলটা প্লাসের আনাগোনা লক্ষ করা যাচ্ছে। আমরা চাই, দেশ পুরোপুরি করোনামুক্ত হোক। সে ক্ষেত্রে টিকাদান কর্মসূচি যেমন জোরদার করতে হবে, তেমনি প্রত্যেক নাগরিককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কোনো রকম শিথিলতা দেখানো যাবে না।