শিক্ষার্থীরা বিপাকে

সম্পাদকীয়

যেখানে ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইতালিসহ উন্নত দেশগুলোতে টিকাবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের টিকা নিতে গিয়ে হয়রানি ও লাঠিপেটার শিকার হওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এর আগে সাধারণ টিকাপ্রার্থীরাও নানা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। তাই বলে শিক্ষার্থীরাও নির্বিঘ্নে টিকা পাবে না! উন্নত দেশগুলোতে একশ্রেণির মানুষ টিকা না দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা মনে করেন, িটকা নেওয়া বা না নেওয়ার স্বাধীনতা প্রত্যেক নাগরিকের আছে। রাষ্ট্র তাঁদের ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না। বিধিনিষেধের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ করেছেন ওসব দেশের নাগরিকেরা।

ঠিক তার বিপরীত ঘটনাই ঘটল বাংলাদেশে। রাজধানী ঢাকা তো বটেই, জেলা শহরগুলোতেও টিকা নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে আসা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটেছে। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা না পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে অনেক জায়গাতেই। বৃহস্পতিবার সকালে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের টিকাদানকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকেরা শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করেন। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকায় তার সচিত্র প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৯ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। জেলায় বুধবার পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০২ শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ ও ৬২ হাজার ৮৮ শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।

একই দিন ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ঘোষণা দিয়েছেন, ২২ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলবে। যেসব শিক্ষার্থী করোনার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে, তারাই কেবল শ্রেণিকক্ষে যেতে পারবে। বাকিদের দ্বিতীয় ডোজ না নেওয়া পর্যন্ত অনলাইন ও টেলিভিশনে পাঠদান হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলতে আরও দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান তিনি।

এ অবস্থায় মাধ্যমিক ও তদূর্ধ্ব স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে টিকা নেওয়ার জন্য ভিড় বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। দেশে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত (১২ বছরের বেশি বয়সী) মোট শিক্ষার্থী আছে ১ কোটি ২৮ লাখের মতো। এর মধ্যে ১ কোটি ২৬ লাখ ৫৭ হাজার ২২২ জন প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে। আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছে ৩৪ লাখ ৪০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। শিক্ষামন্ত্রীর ভাষ্যমতে, ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই অধিকাংশ শিক্ষার্থীর দ্বিতীয় ডোজ টিকাও নেওয়া হয়ে যাবে।

তাঁর এ বক্তব্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মোটেই আশ্বস্ত করবে না। যারা ‘অধিকাংশ’-এর বাইরে থাকবে, তাদের কী হবে? সরকার একদিকে দাবি করছে দেশে যথেষ্ট পরিমাণ টিকা আছে, আবার শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে পারছে না। শুরু থেকে টিকা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা গেছে। প্রথম দিকে টিকার মজুত কম ছিল বলে সবাই টিকা পাননি। এখন কেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে?

আমাদের সুস্পষ্ট দাবি, ২২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। টিকার অভাবে একজন শিক্ষার্থীও যেন শ্রেণিকক্ষের বাইরে না থাকেন, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।