শিশু উদ্ধারে ফেসবুক

ছুরি দিয়ে চাইলে তরকারিও কাটা যায়, কাউকে আঘাতও করা যায়। আগুন দিয়ে রান্নাও করা যায়, বাড়িঘর পুড়িয়েও দেওয়া যায়। ছুরি কিংবা আগুন কল্যাণকর নাকি ক্ষতিকর, তা নির্ভর করে ব্যবহারের ওপর। ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আগুনের মতোই দাহ্য; ছুরির মতোই ধারালো। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে এই মাধ্যমকে সমাজে যেমন নৈরাজ্য সৃষ্টিতে ব্যবহার করা যেতে পারে, তেমনি এর সদ্ব্যবহার সীমাহীন কল্যাণের পথ উন্মুক্ত করে দিতে পারে।

বহু প্রতিষ্ঠান ফেসবুককে পেশাদারি কাজে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এগিয়ে আছে। তাদের বহু সফলতার পেছনে ফেসবুকসহ অন্য সামাজিক মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গত ৩০ জুন ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার থানা-পুলিশ ফেসবুকের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে হারিয়ে যাওয়া একটি শিশুকে তার অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছে। পুলিশের ভাষ্যমতে, ২৮ জুন স্থানীয় এক ব্যক্তি হারিয়ে যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করে রাজাপুর থানায় এসে দিয়ে যান। আট বছর বয়সী শিশুটি মা–বাবার নাম-ঠিকানা ঠিকমতো বলতে পারছিল না। পরে পুলিশ ‘রাজাপুর থানা’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে শিশুটির ছবিসহ একটি পোস্ট দেয়। সেই পোস্ট দেখে শিশুটির বাবা এসে শিশুটিকে নিয়ে যান।

তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া উন্নত বিশ্বের মানুষের কাছে এটি হয়তো বড় কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু আমাদের দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায়ের জন্য এ ঘটনা নিঃসন্দেহে আশাজাগানিয়া। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, গ্রাম পর্যায়ের মানুষও তথ্যপ্রবাহের সঙ্গে জোরালোভাবে যুক্ত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের জন্য এটি একটি সুযোগ। রাজাপুর থানার মতো বাংলাদেশের সব কটি থানা ও পুলিশ স্টেশন যদি সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ গড়ে তোলার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়, তাহলে গোটা সমাজেই একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে।

ফেসবুকের গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। এরপর আরও এক বছর পার হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। তার মানে এই জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আওতায় এসেছে। ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির দূরত্ব ঘোচানোর পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি ও সামাজিক আন্দোলনেও ফেসবুক ভূমিকা রাখছে।

যেহেতু তৃণমূল পর্যায়েও ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে, সেহেতু এর অপব্যবহারের ঝুঁকিও বাড়ছে। এর অপব্যবহার বহু মানুষের জন্য সীমাহীন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই অপব্যবহার পুরোপুরি হয়তো বন্ধ করা সম্ভব নয়; কিন্তু সহনশীল মাত্রায় রাখা জরুরি। পুলিশ এবং অন্যান্য জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাধারণ মানুষের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রশাসনকে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে। ফেসবুক পাতা ‘রাজাপুর থানা’ বিবেচিত হতে পারে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে।