এই সেদিনও মেয়ে আর নাতনিকে নিয়ে জরাজীর্ণ একটা ঝুপড়িতে থাকতেন বরগুনার বেহালা গ্রামের ঊর্মিলা রানী। তা–ও আবার নিজের নয়, অন্যের জায়গার ওপর ছিল সেই ঝুপড়ি। কোনো দিন নিজের একটা বাড়ি হবে, স্বপ্নেও ভাবেননি ঊর্মিলা। সেই ঊর্মিলাই এখন দুই ঘরের আধপাকা একটি বাড়ির মালিক। লাগোয়া রান্নাঘর, শৌচাগার, বারান্দা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় দুই শতক জমির ওপর তাঁকে এ বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে সরকার।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এ রকম ৬৬ হাজার পরিবারকে বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে। কোনো শ্রেণিই বাদ যায়নি। যাযাবর বেদেরা যেমন পেয়েছেন, তেমনি পেয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও। প্রতিটি ঘর তৈরিতে খরচ হচ্ছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ রকম প্রায় ৯ লাখ পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। ধীরে ধীরে সবাইকে এ কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে।
তবে এমন প্রশংসনীয় একটি প্রকল্পকেও ম্লান করে দিচ্ছে দুর্নীতি আর অনিয়ম। অনেক জায়গায় নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। যেমন গত ৩০ জানুয়ারি নির্মাণাধীন অবস্থাতেই ভেঙে পড়ে ঊর্মিলার ঘরের দেয়াল। ঊর্মিলা রানীর অভিযোগ, সিমেন্ট কম ও বালু বেশি দেওয়াতেই এমনটা হয়েছে। সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে করে দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক জায়গায় সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হচ্ছে। কখনো মাল পরিবহনের খরচ, কখনোবা নির্মাণসামগ্রী কেনার কথা বলে এ টাকা দাবি করা হচ্ছে। নির্মাণসামগ্রী পরিবহন খরচের কথা বলে ঊর্মিলা রানীর কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা আদায় করেছেন ঠিকাদার। বরগুনারই ঝাড়াখালীর মনির হোসেনের কাছে নির্মাণের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন ঠিকাদার। তাঁর অভিযোগ, টাকা না দেওয়ায় এখন নিম্নমানের সামগ্রী দিয়েই কাজ করা হচ্ছে। কোথাও তিন ইট দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভিত্তি। কোথাও লিন্টন না করেই লাগানো হয়েছে টিন। ফলে এখনই ভেঙে পড়ছে চালার কাঠ, ঘরের দেয়াল, মেঝের সিমেন্ট। অথচ বাড়িগুলোর কাঠামো ও নির্মাণসামগ্রী বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ীই নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে, বাড়তি টাকা লাগার কোনো প্রশ্নই এখানে নেই।
কতিপয় কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের অসাধু কর্মকাণ্ডের কারণে তাই প্রশংসার কাজ করেও প্রশংসার ভাগীদার হতে পারছে না সরকার। এখনই কড়া নজরদারি ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে মাঠেই মারা যাবে দরকারি একটি প্রকল্প আর প্রশংসার বদলে সরকারের কপালে জুটবে নিন্দা।