সম্প্রীতির সমাবেশে সংঘর্ষ

সম্পাদকীয়

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিএনপির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার দলীয় অফিসের সামনে সম্প্রীতির সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছিল। এর আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল সম্প্রীতির সমাবেশ করেছে; কোনো অঘটন ঘটেনি। কিন্তু বিএনপির সমাবেশ-পরবর্তী মিছিল নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মিছিল করার অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও তারা মিছিল করেছে এবং পুলিশের ওপর ঢিল ছুড়েছে। বাধ্য হয়ে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়েছে এবং ৫০ জনের বেশি কর্মীকে আটক করেছে।

পুলিশ আগে উসকানি দিয়েছে, না বিএনপির নেতা-কর্মীরা দিয়েছেন, সেই বিতর্কে না গিয়েও যে কথা বলতে চাই, তা হলো সম্প্রীতির মিছিলে এ রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে কেন? রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ বা অন্যান্য বাহিনী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ঠেকাতে পারেনি, তাদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব—সরকারি দল হোক কিংবা বিরোধী দল, কেউ সহিংসতা বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে, এ প্রমাণ পাওয়া যায় না। সহিংসতার সঙ্গে জড়িত যেসব ব্যক্তির নাম আসছে, তাতে দেখা যায়, সরকারি ও বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকেরাও এর বাইরে নন। ঘর পোড়ার মধ্যে অনেকেই আলু পোড়ার অপেক্ষায় ছিলেন; অন্যথায় ফেসবুকে গুজবের ওপর ভিত্তি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর এই তাণ্ডব ঘটতে পারত না।

অনেক স্থানেই সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও
সাংস্কৃতিক সংগঠনের দায়িত্ব এই আক্রান্ত ও অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু আমাদের নেতারা ঘটনা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য প্রায় প্রতিদিনই বাহাসে লিপ্ত হচ্ছেন। এটা কেবল দুঃখজনক নয়, সংখ্যালঘু মানুষগুলোর প্রতি চরম পরিহাসও বটে। এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব উভয়ের কাছ থেকে সংযত ও সহিষ্ণু আচরণ প্রত্যাশিত।

পুলিশের দাবি, বিএনপির মিছিলের অনুমতি ছিল না। গণতান্ত্রিক সমাজে যেকোনো নাগরিকের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ কিংবা প্রতিবাদ করার অধিকার আছে। তবে সেই সমাবেশ যাতে অন্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না করে। নিত্য যানজটের ঢাকা শহরে অফিস চলাকালে রাস্তার ওপর সমাবেশ কিংবা মিছিল কাম্য নয়। সে ক্ষেত্রে বিএনপি কর্মসূচি পালনের জন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিন বেছে নিতে পারত। আর অনুমতি ছিল না এই অজুহাতে পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালাতে পারে না। প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, বিএনপির মহাসচিব বক্তৃতা দিয়েই কর্মসূচি শেষ করেছেন এবং কর্মীদের ঘরে ফিরে যেতে বলেছেন। এ অবস্থায় অতি উৎসাহী হয়ে কারা মিছিল নামাল, তা দলটির খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পক্ষপাতহীন থাকতে হবে। এর আগে ক্ষমতাসীন দল শহরের অনেক স্থানে মহাসমাবেশ করেছে। তখন যদি অনুমতির প্রশ্ন না এসে থাকে, এখন কেন আসবে? অন্যদিকে তদন্তের আগে কাদের নাম আসবে কিংবা আসবে না, সে সম্পর্কে ক্ষমতাসীনদের মন্তব্যও কাম্য নয়। এতে সত্য আড়াল পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।