জনবলসংকট, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসক না থাকা, নোংরা পরিবেশ, চিকিৎসাসেবা না পাওয়া—এ রকম অসংখ্য নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হয় দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো। কিন্তু সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নওগাঁর সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবেশ ও চিকিৎসাসেবায় যে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে, তা সত্যিই আশাজাগানিয়া। এ পরিবর্তনের নেপথ্য কারিগর সাপাহার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র তিন বছর আগেও দেশের অন্য সরকারি হাসপাতালের মতোই ছিল। হাসপাতাল চত্বরে খোলা জায়গা পতিত থাকত এবং ওই সব স্থান সারা বছর ময়লা-আবর্জনা ও কাদাপানিতে ভরে থাকত। এখন হাসপাতালের চত্বরজুড়ে বাহারি ফুল আর সবুজের সমারোহ। ঝকঝকে–তকতকে হাসপাতালটির ভেতরে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনের বারান্দায় টবে ও গ্রিলে এবং ভবনের ছাদেও শোভা পাচ্ছে বাহারি ফুল, পাতাবাহার ও সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছ। হাসপাতাল চত্বরে মিনি শিশুপার্ক ও শিশু ওয়ার্ডের পাশে রয়েছে শিশুদের খেলার স্থান ‘কিডস জোন’। রোগীর স্বজনদের জন্য তৈরি করা হয়েছে আলাদা বিশ্রামাগার। শৌচাগারগুলোও পরিচ্ছন্ন রাখা হয় সব সময়।
হাসপাতালের পরিবেশগত এমন উন্নতি যেমন হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবাতেও পরিবর্তন এসেছে। এর প্রমাণ মিলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাসিক প্রতিবেদনে। গত জানুয়ারিতে স্বাস্থ্যব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ (এইচএসএস) রেটিংসে সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সারা দেশে পঞ্চম এবং রাজশাহী বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে। গত বছর হাসপাতালটিতে ৫৫৪ জনের স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে।
হাসপাতালটিতে এসে সেবা পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন রোগী ও স্বজনেরা। কর্মপরিবেশ সুন্দর হওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মস্পৃহা বেড়েছে। হাসপাতালের পরিবর্তনের কারিগর রুহুল আমিন বলেন, ‘হাসপাতালে যোগ দেওয়ার পর আমি ও আমার টিম তিনটি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করি। সেগুলো হলো সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন কর্মপরিবেশ তৈরি, অচল, অর্ধসচল যন্ত্রপাতি ও লজিস্টিকসের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং মানসম্মত চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার।’
সাপাহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ পরিবর্তনে জেলার অন্য হাসপাতালগুলোর পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসেবা পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে। সদিচ্ছা ও সঠিক কর্মপরিকল্পনা থাকলে সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও ভালো কর্মপরিবেশ তৈরি ও সেবা নিশ্চিত করা যে সম্ভব, তার একটা প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হাসপাতালটি। চিকিৎসক রুহুল আমিন প্রমাণ করেছেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির সদিচ্ছা থাকলে প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যেও জনগণের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। সাপাহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনবদ্য এ দৃষ্টান্ত দেশের অন্য হাসপাতালগুলোর জন্যও অনুসরণীয় হতে পারে।