সিদ্ধান্তটি বাস্তবসম্মত ও কার্যকর হোক

সম্পাদকীয়

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য সরকার সারা দেশে রাত আটটার পর দোকান, শপিং মল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নতুন করে কার্যকর হচ্ছে আজ থেকে। এর আগে ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালকের (প্রশাসন) সই করা চিঠিতে এ নির্দেশ পালনে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ১১৪ ধারার বিধান প্রতিপালনের কথা বলা হয়।

১০ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে রাত আটটার পর থেকে ঢাকা শহর বন্ধ রাখার কথা বলেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পবিত্র ঈদুল আজহার কথা বিবেচনায় রেখে ব্যবসায়ীরা সরকারের এ সিদ্ধান্ত এর আগে কার্যকর না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য হলো, দেশজুড়ে রাত আটটার পর দোকানপাট বন্ধ করতে হলে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এটা ঠিক যে ঈদ উৎসবকে ঘিরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙা হয় এবং আমাদের দেশের বাস্তবতায় কিছু ব্যবসা আছে, যেগুলো কার্যত দুটি ঈদের ওপর নির্ভরশীল।

আমরা মনে করি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের দিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাস্তবতা যেমন বিবেচনায় নিতে হবে, তেমনি দেখতে হবে তাতে প্রকৃত অর্থেই জ্বালানি সাশ্রয় হচ্ছে কি না। বর্তমানে সরকারি অফিসের সময় সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা।

বেসরকারি অনেক অফিস সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত খোলা থাকে। অফিস থেকে যাঁরা দূরে থাকেন, তাঁদের ঘরে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। রাত আটটায় দোকান বন্ধ হলে অফিস ছুটির সময় ও দোকানপাট বন্ধের সময় প্রায় কাছাকাছি হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে যানজট বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আর যানজট বেড়ে যাওয়া মানে পরিবহনে জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়া। ফলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে রাত আটটার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা চূড়ান্ত বিচারে কাজে না–ও দিতে পারে।

আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেখতে হবে ব্যবসা-বাণিজ্যের যেন ক্ষতি না হয়, আবার প্রকৃত অর্থেই যেন জ্বালানি সাশ্রয় নিশ্চিত করা যায়। দোকান মালিক সমিতি সকাল ১০টার বদলে দুপুর ১২টায় মার্কেট খুলে রাত ৯–১০টা পর্যন্ত চালানোর প্রস্তাব করেছে।

এতে সকালে অফিস যাত্রার ব্যস্ত সময়ে দোকান কর্মচারী ও ব্যবসায়ীদের কর্মস্থলে যেতে হবে না। অফিস খোলা ও ছুটির সময়ের সঙ্গে দোকান, শপিং মল, মার্কেট বা বিপণিবিতান খোলা ও বন্ধের সময়ের পার্থক্য করা গেলে যানজটের চাপ কিছুটা হলেও ভাগাভাগি করা যাবে। যানজট পরিস্থিতি সহনীয় করতে অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ও বন্ধের সময় সমন্বয় করার প্রস্তাব বিভিন্ন সময় এসেছে নগর–পরিকল্পনাবিদদের কাছ থেকে।

দোকান, শপিং মল ও মার্কেটের পাশাপাশি কাঁচাবাজারও রাত আটটার পর বন্ধ রাখার নির্দেশনা কতটা বাস্তবসম্মত, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। মানুষ দিনের কাজ শুরু করার আগে কিংবা কাজ শেষ করে কাঁচাবাজারের কেনাকাটা সারেন। খাবার হোটেল ও ওষুধের দোকানের পাশাপাশি অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে কাঁচাবাজারের ওপর থেকেও রাত আটটার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

সরকারি ঘোষণায় জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য এখন পর্যন্ত দোকান, শপিং মল বন্ধের সময়সূচিই বেঁধে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সরকারি গাড়ির ব্যবহারসহ আরও কোন কোন ক্ষেত্রে জ্বালানি সাশ্রয় করা যায়, সে বিষয়টি নিয়েও সরকারের চিন্তাভাবনা করা উচিত।

আমরা মনে করি, ব্যবসায়ী মহলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করলে এ ব্যাপারে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর উদ্যোগের পথ বের হবে।