সিলেটে ৩০০ গাছনিধন

সম্পাদকীয়

করোনাকালে নদী দখল, পাহাড় বা টিলা ধ্বংস ও নির্বিচার গাছ কাটা চলছেই। স্থানীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি থেকে শুরু করে সরকারি প্রতিষ্ঠান এ খেলায় মেতে উঠেছে। তারই ভয়াবহ নমুনা দেখা গেল সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায়। নালা তৈরির জন্য কিছু গাছ কাটার কথা ছিল সেখানে। কিন্তু রাতারাতি কেটে ফেলা হয়েছে তিন শতাধিক গাছ। বন বিভাগের কোনো অনুমতির তোয়াক্কাই করা হয়নি। কিছুদিন আগে ফুটপাত সম্প্রসারণের প্রকল্পে গাছ রক্ষা করায় আমরা সিলেট সিটি করপোরেশনকে প্রশংসা করেছিলাম। কিন্তু গত সোমবার রাতের এ ঘটনায় নিজেদের নামের সঙ্গে কালিমা যুক্ত করল তারা। সিলেটকে বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত করতে চায় কি তারা?

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকায় রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে গাছগুলো ছিল। ১৯৯০ সালের দিকে স্থানীয় বাসিন্দারা গাছগুলো রোপণ করেছিলেন। সেই ছায়ানিবিড় রাস্তাটি যেন এখন প্রকৃতিশূন্য। নালা করতে অল্প কিছু গাছ কাটার জন্য বন বিভাগকে একটি চিঠি দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। তবে বন বিভাগের অনুমতি পাওয়ার আগেই এক রাতে কেটে ফেলা হয়েছে এসব গাছ, যার দাম কয়েক কোটি টাকা। সেখানে বড় আকারের গাছ রয়েছে শতাধিক। খবর পেয়ে বন বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত করে গাছ বেচাকেনার সত্যতা পেয়েছে। তাদের মতে, প্রকল্পের জন্য বড়জোর ৫০টির মতো গাছ কাটলেই হতো।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দল থেকে নির্বাচিত স্থানীয় কাউন্সিলর সালেহ আহমেদ সেলিমের নেতৃত্বে এসব গাছ কাটা হয়েছে। মেয়র বিএনপি থেকে নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকে মানেন না ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিলররা, যার করুণ পরিণতি দেখতে হলো আজ উপশহর এলাকার বাসিন্দাদের। এর সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তারও যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বুধবার আরেকটি প্রকল্পে চৌহাট্টার শতবর্ষী একটি গাছ কাটা ঠেকিয়ে দিতে পেরেছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। তাঁদের প্রতিবাদে পিছিয়ে এসেছে সিটি করপোরেশন।

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘আমরা তো প্রকল্প বাস্তবায়নে গাছ রক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। উপশহরে গাছ কাটার বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে। আর যাতে অকারণে কোনো গাছ কাটা না হয়, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াব।’ এ হচ্ছে গাছ রক্ষার নমুনা! আইন লঙ্ঘন করেই নির্বিচার এতগুলো গাছ কেটে ফেলা হলো। তদন্ত কমিটি গঠন করে অসাধু চক্রের সবাইকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হোক।